পানির নিচে সুনামগঞ্জ, দুর্গতদের পাশে পীর মিসবাহ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার অবণতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।তিন দিনের বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত  হওয়ার পর সোমবার ভোরে সুনামগঞ্জ শহরের ব্যস্ততম এলাকা উকিলপাড়া, কাজিরপয়েন্ট ও ষোলঘর মাদ্রাসা রোড প্লাবিত হয়েছে।পানির নিচে তলিয়ে শহরের গেছে তেঘরয়িাঘাট এলাকা।

বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে জনজীবনে বাড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ১৯৮৮ কিংবা ২০০৮ সালের মতো ‘বড়বানি’র (বড় বন্যা) আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুনাগঞ্জ-নবীনগর-হালুয়ারঘাট সড়ক গত তিন দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চার ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাঢ়ি ঢলের কারণে সীমান্তবর্তী সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের অনেক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি।তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত, রোপা আমন ও আমনের বীজতলা।

একই অবস্থা জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলারও। উপজেলা সদরসহ বেশিরভাগ ইউনিয়নের মানুষ এখন পানিবন্দি। বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাস্তার পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষির।

সোমবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপরে রেকর্ড করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ভোর ৬টায় যা ৮ সেন্টিমিটার কম ছিল।সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকলেও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, দুর্গত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। গত তিন দিন ধরে বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরের বিভিন্ন দুর্গত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার তাহিরপুর উপজেলা। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, মাহারাম, রক্তি, বৌলাইয়ের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদী উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। উপজেলার বালিজুরী, বাদাঘাট, তাহিরপুর সদর, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর বড়দল, দক্ষিণ বড়দল  ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। ওই  সাত ইউনিয়নের গ্রামীণ ছোট ছোট রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ কার্লভার্টসহ অনেক বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা  বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেঝেতে পানি ওঠায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বন্যার পানি তোড়ে বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলি ব্রিজের অ্যাপ্রোচ, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, সড়ক ও জনপথের আনোয়ারপুর-ফতেপুর রাস্তার ৩ স্থানে ভাঙ্গন, আনোয়ারপুর ব্রিজ হতে বালিজুড়ি পর্যন্ত  রাস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। গত তিন দিন ধরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লীবিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে ঢলের পানি তীব্র বেগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঢলের পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গত দু’দিন ধরে উপজেলা সদরের সঙ্গে সব ক’টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সদ্য ফলনকৃত আউশ ও আমনের চারা গত তিন দিন ধরে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের মৎস্য খামারের লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অন্যদিকে প্লাবিত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশুসহ হাঁস-মুরগী নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।

ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ছাতক শহরের মাছবাজার, পুরাতন কাস্টমসহ অলি-গলিতে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের পেপারমিল সংলগ্ন সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে উপজেলার সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে। নতুন করে আমন জমি ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মৎস্য খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। মাছ ভেসে যাওয়ার ভয়ে খামারের মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি।

এছাড়া বন্যায় জেলার, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম হাওর বার্তাকে জানিয়েছেন, বন্যার্ত মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলার ১১টি উপজেলার প্রতিটিতে ১৩ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি প্রশাসনের রয়েছে। দুর্গত মানুষদের সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে  নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।বিপদের এই সময়ে উপজেলা প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর