সামন্ত, হাতটা কি রেখে অপারেশন করা যায় না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির হাত না কেটেই শনিবার (১২ আগস্ট) প্রথম অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। মুক্তামনি হাতপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শত ব্যস্ততার মাঝেও খোঁজ-খবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি তার চিকিৎসার ব্যয়ভারও গ্রহণ করেছেন তিনি।

মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন মুক্তামনির ব্যাপারে আলাপচারিতায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামন্ত, হাতটা রেখে কি অপারেশন করা যায় না?’

প্রধানমন্ত্রী এমনটিই বলেছিলেন বলে জানালেন ডা. সামন্ত লাল সেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে হাত রেখে সফল অপারেশন সম্পন্ন করা।… আজকে (শনিবার, ১২ আগস্ট) মুক্তামনির হাত রেখে অপারেশন করায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তার পক্ষে ধন্যবাদ পাওয়াটা কতটুকু গুরুত্ব বহন করছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। সত্যি আমরা সবাই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সব চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

এর আগে সকাল ৮টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার শুরু করেন। অস্ত্রোপচার শেষে বেলা সোয়া ১১টায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

এরপর মুক্তামনির অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থা জানাতে গিয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিদের ব্রিফ করা হয়। ব্রিফিংয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির হাতের মাংসপিণ্ড সফলভাবে অপসারণ করা হয়েছে। তবে এখনই তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে আরো ৫-৬টি অস্ত্রোপচার করা লাগবে।’

সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে মুক্তামনি (১২)। জন্মের দেড় বছর পর মুক্তামনির হাতে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে।

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত ডান হাত এখন ছোট আকারের গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে প্রচণ্ড ভারী হয়ে উঠেছে। এতে পচনও ধরেছে। পোকাও জন্মেছে। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকে মুক্তামনি। আক্রান্ত স্থান থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এ রোগ তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। এসব কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি মুক্তামনির এ বিরল রোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গত ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে ৬০৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের অপারেশন থিয়েটারে শনিবার (৫ আগস্ট) তার বায়োপসি সম্পন্ন হয়। বায়োপসি রিপোর্টে তার রক্তনালীতে টিউমার ধরা পড়ে। যা অপসারণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর