‘টমটম’ চালিয়ে চলে না জীবন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘোড়ার গাড়ি রাজকীয় ঐতিহ্যের অংশ। ঘোড়ার গাড়ি অনেক জায়গায় ‘টমটম’ নামেও পরিচিত। ঘোড়ার গাড়ির যখন প্রচলন হয় তখন ভারতবর্ষে চলে ইংরেজ শাসন। `টমটম` করে ঘুড়ে বেড়াতে চাইলে আসতে পারেন পুরান ঢাকার গুলিস্তানে।

মোঘল সাম্রাজ্যে ৪০০ বছর আগে এই বস্তুর আভির্ভাব হয়েছিল, সেটা কিছু সংখ্যক ‘ঢাকাইয়া কুট্টি’ এখনও ধরে রেখেছেন শখের বসে। তাতে করে অবশ্যই এই ব্যবসার সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসাও করতে হচ্ছে পেট চালানোর জন্য। টমটম তাদের কাছে শুধুই বাপ-দাদার ঐতিহ্য রক্ষা। সবমিলিয়ে গাড়ির সংখ্যা জানতে গিয়ে রীতিমতো বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে।

তখনও যাত্রী বোঝাই করা শেষ হয়নি। কোচোয়ানের আসনে বসে আছেন এক বিদেশি। হাতে থাকা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছেন সামনের ঘোড়া আর মানুষের। পাশ থেকেই কেউ একজন বলে উঠল, ‘আজ বকরি পাইছে রে!’ ২০ টাকার ভাড়া কত নেবে কে জানে! শেষপর্যন্ত ২০০ টাকা ভাড়া দিয়েছিলেন চীনা নাগরিক হুং চে বে।

‘চতুর’ লাইনম্যান বাবু মিয়া জানান, এই মুহূর্তে টমটমের সংখ্যা ১৫ খানা। এক অতি উৎসাহী কোচোয়ানের মতে ৪৫ টারও বেশি। আরেকজন আবার গোপনে বলে গেলেন, এখন টমটম আছে ৩০ খানা। কিন্তু আদৌতে খোঁজ নিয়ে ৩০-৩৫ টার মধ্যেই সত্যতা মিলল।

কিন্তু চরম জীর্ণতার মুখে রয়েছে টমটম গাড়ির পেশার সঙ্গে যুক্ত লাইনম্যান থেকে শুরু করে ড্রাইভার-হেল্পার এমনকি ঘোড়াগুলোও। লাইনম্যান বাবু বলেন, ‘আমি এই কাজে আছি ২৫ বছর। আগে যতগুলো গাড়ি দেখেছি, এখনও তাই। বাড়েওনি, কমেওনি। মালিক অনেকগুলো। কেউ বা নিজের গাড়ি নিজেই চালায়। কোনোরকমে জোর করে চেপে ধরে টমটম এখনও রাস্তায় দৌড়াচ্ছে।’

যেহেতু গুলিস্তান-পুরান ঢাকা মাথাপিছু ভাড়া ২০ টাকা, তাই আসা-যাওয়া পাঁচবারে একেকটা টমটমের দৈনিক উপার্জন ২৪০০ টাকা। এর মধ্যে কোচোয়ান পায় ৩০০ টাকা, হেল্পার ৩০০, লাইনম্যান ৬০, আর ঘোড়ার খোরপোশ ৫০০। তাতে ড্রাইভারের পকেটে আসে ৫০০ টাকা, হেল্পার ৩০০ টাকা। রিজার্ভে গেলে ‘মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ এর মাধ্যমে ভাড়া ঠিক করা হয়।

মানিকগঞ্জ কিংবা নারায়গঞ্জ থেকে ঘোড়া আনা হয়। প্রতি ঘোড়া ৪০-৬০ হাজার টাকা। খুব ভালো হলে লাখ টাকার অংকও পার হতে পারে। আর দুটি ঘোড়ার সাথে গাড়ি মিলিয়ে একটি টমটমের মূল্য প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। আর সেই টাকা উঠে আসতে কত বছর লাগে, তার সঠিক হিসাব মালিক নিজেও দিতে পারলেন না!

দিনশেষ প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। তারপরও এই পেশার সাথে জড়িয়ে আছে কিছু মানুষের জীবন। ভাগ্য বদলাবার চেষ্টা নেই, টমটমের জীর্ণ চাকায় নিজেদের ভাগ্যের চাকা বেঁধে নিয়েই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

তাই আপন মনেই তাদের মুখে হতাশার দাবি, ইতিহাস বেচেও যদি ভালো থাকতাম তাহলেও কিছু হতো। সরকারও যদি খানিকটা নিজ উদ্যোগে দেখভাল করত, অন্তত তারা ঘোড়ার জন্য যতটুকু করে, না হয় ততটুকুই!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর