ছিটমহলবাসীর দুঃখের দিন শেষ হয়নি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৬৮ বছর পর ছিটমহলবাসী মুক্ত। মুক্ত হলেও ২ বছরেও পূরণ হয়নি তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা। সরকারি ভাবে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও হয়নি পূরণ। লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি ছিটমহলে এখনো তেমন লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিটবাসী। ৬৮ বছর পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন হলেও বিলুপ্ত ছিটবাসীরা এখনো রয়েছে অবহেলায়। সরকারি ভাবে বিশেষ বরাদ্দ ছিটবাসীর জন্য হলেও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের অনীহার কারণে বন্ধ রয়েছে উন্নয়ন সেবা। ২ বছর পূর্তি ও ৩ বর্ষে যাত্রা উপলক্ষে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত ছিটের মুক্তির ৩য় বর্ষে পদযাত্রার কর্মসূচির উদ্বোধন হবে। মঙ্গলবার সকাল থেকে র‌্যালি, আলোচনা সভা, বৃক্ষ রোপণ, লাঠি খেলা, হা-ডু-ডু খেলাসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে। মুক্তির যেমন আনন্দ তেমন রয়েছে বিলুপ্ত ছিটবাসীর ক্ষোভ। লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন ছিটমহল ঘুরে সরজমিনে দেখা গেছে উন্নয়নের বঞ্চনায় ছিটবাসী। ২০১৫ সালের ৩১শে জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিট মুজিব ইন্দিরা ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশি নতুন নাগরিক লাভের পর প্রত্যাশা ছিল  ছিটবাসী তাদের ৬৮ বছরের বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে তারা ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটাবে। কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে নাটকীয়ভাবে। তাদের জমি-জমা রয়েছে জটিলতায়। ২ বছর ধরে জটিলতায় বন্ধ রয়েছে জমি ক্রয়-বিক্রয়। সড়ক রয়েছে ভাঙাচুরা। বঞ্চিত থেকেই গেছে বিলুপ্ত ছিটবাসী। বন্দিদশা থেকে ছিটমহলবাসীর মুক্ত ২ বছর কেটে গেলেও এখনো তেমন একটা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ছিটমহল গুলোতে। ছিটমহল গুলোতে সরকারি ভাবে উন্নয়নের বিশেষ বরাদ্দ দিলেও ২ বছরে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো। ২০১৫ সালের ৩১শে জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ছিটমহল মুক্ত হলেও ২ বছরেও কাজের অগ্রগতি ধীর গতিতে। লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ৯ হাজার মানুষের উন্নয়নের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিটবাসী। বিলুপ্ত ছিটমহলে চলাচলের সড়কগুলো রয়েছে বেহাল দশা। গড়ে উঠেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দূর হয়নি বেকারত্ব। বেকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের বিশেষ  কোটা ব্যবস্থায় হয়নি চাকরি। জমির কাগজপত্র জটিলতায় বন্ধ রয়েছে ২ বছর ধরে জমি ক্রয়-বিক্রয়। এর কারণে বিভিন্ন সময় অর্থ প্রয়োজন হলেও জমি বিক্রয় করতে না পেরে পড়ছে ছিটমহলবাসী নানান সমস্যায়। লালমনিরহাট জেলায় পাটগ্রামের বাঁশকাটা, পানিশালা, জমজম, পানিবাড়ী, বামনদল, হাতিবান্ধার গোতামারী, লালমনিরহাট সদরের ভিতরকুঠি ও বাঁশপচাইসহ ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে গিয়ে দেখা গেছে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি হয়নি এখনো বাস্তবায়ন। বাঁশকাটা বিলুপ্ত ছিটমহলের ৫০ বছরের বাসিন্দা রহিম বকস জানান, রাস্তা কাজ শুরু করলেও ২ বছর থেকে ভাঙাচুরা অবস্থায় রয়েছে। পানিশালা ছিটমহলের বাসিন্দা কাজী রবিউল জানান, ছিট উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার লুটপাট করে খায় প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়। কুলাঘাটের ছিট ভিতরকুঠির নাজমা বেগম জানান, হামার ছিটোত স্কুল হয়নি, ক্লিনিক হয়নি খালি বিদ্যুৎ হইছে। মতিয়ার রহমান  জানান, ৬৮ বছর ধরে সরকারি চাকরি পায়নি এখন বাংলাদেশি হয়ে চাকরি দেয়ার কোটা থাকলেও হামাক চাকরি দেয় না। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের এলজিইডি পক্ষ থেকে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়নের কথা থাকলেও ২ বছরেও এখনো করতে পারেনি সড়ক নির্মাণ। কিছু কিছু স্থানে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তাও চলছে ধীর গতিতে। সড়কগুলো ও সেতু-কালভার্ট অনেক কাজের এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে এখনো ২ বছরেও কাজ শেষ করতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিলুপ্ত ছিটবাসীদের। তবে দ্রুত কাজ সমাপ্ত ও টেন্ডার প্রক্রিয়া জটিলতা শেষ করে কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানান লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী অধিদপ্তরের সিনিয়ার প্রকৌশলী মাসুদুজ্জামান। ওদিকে ভূমি জটিলতা বিলুপ্ত ছিটমহলে দ্রুত দূর  হবে বলে জানালেন মো. রাশেদুল ইসলাম, শিট কিপার সেটেলমেন্ট কর্মকতা লালমনিরহাট। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তবে আরো উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন জেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান জানান, বিলুপ্ত ছিটমহলে সরকারের প্রতিশ্রুতির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে দপ্তর গুলোতে। সরকারের প্রতিশ্রুত দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি লালমনিরহাটের বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর