হলি আর্টিজান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কতজন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নব্য জেএমবি’র নেতা তামিম চৌধুরী কিংবা তার সহযোগী মারজান নিহতের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এরা গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী বা ‘মাস্টারমাইন্ড’। এরপর গত এপ্রিল মাসে চাপাইনবাবগঞ্জে বাশারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজানের নিহতের পর তাদেরও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে অভিহিত করা হয়। সর্বশেষ গত  শুক্রবার (২৮ জুলাই) নাটোর থেকে জেএমবি’র সদস্য রাশেদ গ্রেফতার হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জঙ্গি রাশেদ ছিল হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড।’ প্রশ্ন উঠেছে, হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত মাস্টারমাইন্ড আসলে কতজন? কিংবা  মাস্টারমাইন্ড  বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? তাদের ভূমিকাই বা কী ছিল?

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে  কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. আবদুল মান্নান হাওর বার্তাকে বলেন, ‘সিটিটিসির অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী হলি আর্টিজান হামলার মূল ব্যক্তি তামিম চৌধুরীসহ আরও পাঁচ থেকে ছয়জন প্ল্যানিং পর্যায়ে ছিল। তাদের সবাইকে মাস্টারমাইন্ড বলা হয়ে থাকে। এমন অনেকেই ছিল, যাদের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর সরাসরি যোগাযোগ  না থাকলেও  হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সব তথ্যই তারা জানতো। আর যারা জানতো তারা সকলেই হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নকারী বেশিরভাগ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা করেছে। বেশিরভাগ মাস্টারমাইন্ড বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। রাশেদ ওরফে র‍্যাশ গ্রেফতার হওয়ার পর তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি’র কাছে মাস্টারমাইন্ডের তালিকায় কেবল পলাতক  হাদিসুর রহমান ওরফে সাগরের নাম আছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, ‘মাস্টারমাইন্ড বলতে বুঝায় পরিকল্পনাকারী। জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালনকারী শীর্ষ প্রত্যেক ব্যক্তিই মাস্টারমাইন্ড।’

তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে হামলার মূল দায়িত্ব পালন করেছে তামিম চৌধুরী। এজন্য সে ‘মূল মাস্টারমাইন্ড’। বাকিদের মধ্যে যারা বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেছে তারাও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে গণ্য। এদের কেউ অর্থ দিয়েছে।  কেউ প্রশিক্ষণ দিয়েছে।  আবার কেউ অস্ত্র সরবরাহকারীর মূল দায়িত্ব পালন করেছে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল প্রধানকেই কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মনে করে। এদের মধ্যে হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় পাঁচজনসহ পরবর্তীতে আরও একাধিক অভিযানে মোট ১৫ জন জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছে। যদিও তাদের সবাই মাস্টারমাইন্ড ছিল না।

সিটিটিসির তথ্যমতে, হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় জড়িত একমাত্র মাস্টারমাইন্ড হিসেবে হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর এখনও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আছে।  এরপর আর কোনও মাস্টারমাইন্ড নাই।

পলাতক হাদিসুরের অবস্থান প্রসঙ্গে  ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম  শনিবার (২৯ জুলাই)  সাংবাদিকের বলেছেন, ‘হাদিসুর রহমান সাগর দেশেই আছে। কোথাও পালিয়ে আছে। এমনকি নিজেই একটি গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করছে। তার সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য আছে।’

সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম হাওর বার্তাকে জানান, মূল মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। তার হয়ে প্রশাসনিক, দাফতরিক, যোগাযোগ, আর্থিক ও সামরিক শাখায় বিভিন্ন হাত কাজ করেছে। র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, সারোয়ার জাহান ওরফে রহমান নব্য জেএমবির আর্থিক বিষয়ে দেখভাল করতো। তবে কাউন্টার টেরোরিজম-এর তথ্যমতে, হলি আর্টিজান হামলায় ব্যয় করা অর্থের উৎস মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। অন্যান্য মাস্টারমাইন্ড -এর মধ্যে মেজর জাহিদ (অব.) ও  আবু রায়হান ওরফে তারেক প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। সদস্য সংগ্রহ ও বাছাইয়ের মূল ভূমিকা পালন করেছে রাজিব গান্ধী।

এছাড়া নূরুল ইসলাম মারজান হলি আর্টিজান বেকারি রেকি করেছে। শুধু তাই নয়, অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সফলতার সঙ্গে পালন করায় গোয়েন্দা ও সিটিটিসি’র তথ্যমতে, সেও একজন মাস্টারমাইন্ড। এর বাইরে আরও ছিল তানভীর কাদের ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর