ঘুম না এলে কি করবেন

 হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘুমের ব্যাঘাত এমন ঘটতে থাকলে দীর্ঘ দিন, ঘুমের ঘাটতি শরীরের কষ্ট বয়ে আনে মনে কষ্ট। মেজাজ বদলে যায়। চিন্তা-ভাবনার কৌশল সূক্ষ্ম থাকে না, বিচার বুদ্ধিও আর আগের মতো থাকে না। ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরেও হয় অনেক সমস্যা যেমন- হূদরোগ, স্থূলতা ও ডায়াবেটিস ইত্যাদি। সাহায্য চাই তখন।

মনে হবে জীবন বিলাশ, কিন্তু তাই বলে এমন বেহিসাবি ঘুম গোলমেলে করে দেয় দৈন্দিন দেহছন্দ। নিদ্রা ও জাগরণের সূচী যায় পালটে। তখন নির্ঘুম কাটে রাত।

নানা কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। মানসিক উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে কাজের অস্বাভাবিক চাপ, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি ইত্যাদি কারণে অনিদ্রা সমস্যা জটিল রূপ নিতে পারে। ভালো ঘুমাতে পারেন না—এমন অনেকেই জানেন, তাঁদের এ সমস্যার জন্য জীবনযাত্রার ধরনই দায়ী। কারণ, তাঁদের নিয়মিত কাজকর্মের সময়সূচিটাই গোলমেলে।

ঘুম না এলে যা করবেন

১. বিছানা থেকে উঠে যান

অনেকেই আছেন যাঁরা ঘুম না এলেও ঘুম আসার জন্য বিছানার এপাশ ওপাশ করতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খেলা বন্ধ করুন এবং বিছানা থেকে উঠে যান। ২০, ৩০, ৪০ মিনিট- যতক্ষণ না ঘুম আসে বিছানায় আসবেন না। এই ৩০ থেকে ৬০ মিনিট এমন কিছু করুন যা আপনাকে ক্লান্ত করে দেবে। এই ক্লান্তি ঘুম আসতে সাহায্য করবে। তবে খুব বেশি আলোর মধ্যে কিছু করতে যাবেন না। তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে ঘুম একেবারেই উধাও হয়ে যেতে পারে।

২. ক্যাফেইন এড়িয়ে যান

ক্যাফেইন-জাতীয় খাবার ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে শেষ চা বা কফিটুকু পান করুন। এমনকি যাঁদের ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের দুপুরের খাবারের পর কফি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফাইল ছবি

৩. গরম পানিতে গোসল

ঘুম না আসার সমস্যা হলে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এই পদ্ধতি শরীরকে শিথিল করে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।

৪. ধ্যান

একটি চমৎকার মেডিটেশন বা ধ্যান ঘুম আসতে বেশ কার্যকর। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ধ্যান ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে। ধ্যান মন ও শরীকে শিথিল করে। এ ছাড়া ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ঘুম আসতে বেশ সাহায্য করে।

৫. শারীরিক পরিশ্রম

শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ঘুম আসতে কার্যকর প্রাকৃতিক ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের ঘুম ভালো আসে। তাই ভালো ঘুম হতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন।

৬. যোগব্যায়াম

সারা বিশ্বেই যোগব্যায়াম করা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায়ের নাম। যোগব্যায়াম শরীরকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।

৭. অ্যারোমা থেরাপি

অ্যারোমা থেরাপির মধ্যে যে প্রয়োজনীয় ভেষজ তেল, বাথ স্ক্রার, চোখের মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভালো ঘুম হতে উপকার করে। ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ভেষজ তেলের ঘ্রাণ গভীর ঘুমের জন্য বেশ উপকারী। তাই যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা পার্লারে গিয়ে অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে দেখতে পারেন।

৮. শোবার ঘর

ভালো ঘুমের জন্য শোবার ঘরও হওয়া চাই উপযুক্ত। আপনি হয়তো এমন ঘরে ঘুমালেন, যার আশপাশে অনেক শব্দ হয় বা প্রচুর আলো এসে পড়ে। এগুলো ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই শোবার ঘরের কিছু পরিবর্তন জরুরি। একটু মন দিয়ে ভাবুন কী পরিবর্তন করলে আপনার শোবার ঘরটি ঘুমের উপযুক্ত হবে? সেটা হতে পারে ম্যাট্রেসের পরিবর্তন বা জানালায় ভারী পর্দা লাগানো। এ ছাড়া ভালো ঘুমের জন্য টিভি, কম্পিউটার এসব জিনিসগুলোও শোবার ঘর থেকে দূরে রাখুন। কেননা এগুলোও ভালো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

৯. ভেষজ চা

ঘুমের আগে চা-কফি একদম খাবেন না, তবে ক্যাফেইন ছাড়া ভেষজ চা খেতে পারেন। যেমন : ভ্যালেরিয়ান অথবা ক্যামোমিল চা ইত্যা্দি ঘুমের আগে খেতে পারেন। এগুলো ঘুম ভালো করতে সাহায্য করবে।

১০. প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম

১৯১৫ সালে আবিষ্কার হওয়া ব্যায়ামের এই পদ্ধতি এখনো পুরোনো হয়নি। প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেন ব্যায়াম এমন একধরনের ব্যায়াম যা পেশিকে শিথিল করে। এটি অবসন্নতা দূর করে ঘুমের পরিমাণ বাড়ায়। তাই ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ব্যায়ামও শিখতে পারেন।

বয়স অনুযায়ী ঘুমের হিসাব
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শপত্র অনুযায়ী ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, তবে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুমাতে পারলেও ওরা নিজেকে চালিয়ে নিতে পারে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে কারও কারও নিয়মিত ৭ ঘণ্টা ঘুমালেও চলতে পারে। আর বয়ঃসন্ধির সময়টাতে অনেকেরই প্রায় ১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ১১ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ঘুমালে তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

মার্কিন গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য শিকাগোর লয়োলা ইউনিভার্সিটির লিডিয়া ডনকারলোস বলেছেন, সারকাডিয়ান ক্লক বা দেহঘড়ির প্রভাবে টিনেজারদের সাধারণত রাতে একটু দেরিতে ঘুম পায় এবং ওরা দেরি করে ঘুম থেকে উঠতে চায়। কিন্তু যখনই ঘুমাক আর যখনই উঠুক, নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানোটা খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, ছুটির দিনে ঘুম পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা অনেকেই করে বটে কিন্তু আসলে ‘বকেয়া ঘুম কখনোই পুষিয়ে নেওয়া যায় না’।

১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, তবে কারও কারও নিয়মিত ৬ ঘণ্টা ঘুমেও সব ঠিকঠাক থাকতে পারে। ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ঘুমানো প্রয়োজন ৭-৮ ঘণ্টা। কিন্তু অনেকেই দিনের বেলায় ভাতঘুম দিয়ে রাতে নিয়মিত ৫ ঘণ্টাতেও দিব্যি ভালো থাকতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর