বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া অপশক্তি রুখতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে হত্যার ঘটনা দেশবাসীকে নতুন করে নাড়া দিয়েছে। দুর্বৃত্তদের হাতে একের পর এক ব্লগার হত্যা মানতে পারছেন না কেউই। দেশের বিশিষ্টজনরা মনে করেন, চিহ্নিত এই অপশক্তিকে রুখতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। মানবকণ্ঠকে তারা আরো বলেন, রাষ্ট্র আন্তরিক হলেই, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধ করা সম্ভব।
টিআইবির পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মানবকণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রের কাজ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া; মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এটা মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। কিন্তু এখন এটা দারুণভাবে খর্ব হচ্ছে। মুক্তচিন্তার মানুষদের হিটলিস্ট তৈরি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা সর্বজন স্বীকৃত, অপরাধীরা সবসময়েই অপরাধ শেষে কোনো না কোনো ক্লু রেখে যায়। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্লগার হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু বের করতে পারেনি এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই আন্তরিকভাবে তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু না। যথাযথভাবে তদন্তসাপেক্ষে বিচারের মুখোমুখি করলেই জাতি তথা রাষ্ট্র উপকৃত হবে। আর এটা করতে ব্যর্থ হলে জাতিকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। ক্রমেই এরা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেন, মৌলবাদদের দুর্বল ভাবলে ভুল হবে। অর্থনৈতিকভাবে ওরা খুবই শক্তিশালী। তিনি জানান, আমরা সংখ্যায় বেশি; কিন্তু শক্তি ও সংগঠনে ওরা শক্তিশালী; আমরাই দুর্বল। তিনি বলেন, দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। টআর ব্লগার রাজিবকেই প্রথম হত্যা করা হয়নি। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়েও ওরা বুদ্ধিজীবীদের ওপর আঘাত করেছে। আমাদের মেধাশূন্য করতে চেয়েছে। এখনো তার ধারাবাহিকতা চলছে। নামে-বেনামে জিহাদের মাধ্যমে ওরা জোরপূর্বক ইসলাম কায়েম করতে চায়। যার কারণে মুক্তচিন্তা বা মুক্তবোদ্ধারাই ওদের টার্গেট। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যদি এখনো সিরিয়াস না হয়, তবে আরো তরতাজারা প্রাণ হারাবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সামরিক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন মানবকণ্ঠকে জানান, দেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলেই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একের পর এক ব্লগার নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে, সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এ কারণে শুধু ব্লগার নয়, প্রতিদিনই শিশু কিংবা নারী হত্যার ঘটনা ঘটছে। যারা ব্লগারদের খুন করছে, তারা ভাবছে তারা সঠিক লাইনেই আছে। এমনকি তারা ঘোষণা দিয়েই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। আবার হত্যার পর দায় স্বীকারও করছে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের বাইরে তদন্তে যেতে পারছে না। তাছাড়া জঙ্গিদের চেয়ে তাদের লজেস্টিক সাপোর্ট কম। পাশাপাশি এরা তদন্তে নামতে না নামতেই, রাজনৈতিক কালার দেয়া হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার যেমন দরকার; তেমনি দরকার সুশাসনের। এজন্য তিনি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপরও গুরুত্ব দেন।
পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ব্লগার হত্যায় জড়িত ধর্মীয় উন্মাদনাকারী অপশক্তিকে সঠিকভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে না। একে একে তরুণের প্রাণ হারানোর ঘটনা রীতিমতো এলার্মিং। মুক্ত লেখালেখির কারণে কাউকে প্রাণ দিতে হবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারকেই বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সুষ্ঠভাবে তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটলে পরবর্তীতে যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে অবশ্যই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর