ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ে এডভোকেট সাহারা খাতুন এর ভূমিকা…

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৬ জুলাই ২০০৭, ভোর রাতে ধানমন্ডি পাঁচ নম্বর ‘সুধা সদন’ ঘিরে ফেলল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কদিন ধরেই ফিসফাস কথাবার্তা ছিল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভা নেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হতে পারেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুধাসদন ঘিরে ফেলে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করল। বাসার লোকরা দরজা খুলে দিল। যৌথবাহিনী ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করল। শেখ হাসিনা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘তোমাদের প্রধান কে?’ একজন সেনা কর্মকর্তা এগিয়ে এলেন। শেখ হাসিনা শান্ত, স্থির। বললেন, ‘ তোমার যা দরকার আমাকে বলো, উচ্ছৃংখলতা করো না।’ এরপর শুরু হলো তল্লাশি। লাইব্রেরি, কম্পিউটার কিছুই বাদ গেলো না।

শেখ হাসিনা বললেন, আমি কয়েকটা ফোন করব। সেনা কর্মকর্তা সম্মতি দিল। ওই ভোরে শেখ হাসিনা তিনটি ফোন করেছিলেন। প্রথম ফোনটি যাকে করেছিলেন, তাঁর নাম সাহারা খাতুন। একটা কল যেতেই সাহারা খাতুন ফোনটা ধরলেন। অপর প্রান্ত থেকে প্রিয় নেত্রী জানালেন যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর এক মুহুর্ত দেরি করলেন না, ওই ভোররাতে ছুটে এলেন। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া গাড়ির বহরের পিছনে পিছনে ছুটলেন। সকালে শেখ হাসিনাকে আদালতে তোলা হলো। অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন শেখ হাসিনার কাছ থেকে ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিলেন। জামিনের আবেদনও করলেন। তারপর চলল আইনি লড়াই। এই আইনি লড়াইয়ে অনেক খ্যাতিমান আইনজীবী ছিলেন, যাদের একসূত্রে গ্রথিত করেন সাহারা খাতুন। তিনি ছিলেন সবার যোগসূত্র। তখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও সাহারা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন আবার অনেকেই গ্রেফতার আতংকে এড়িয়ে চলেছেন। নেত্রীর খোঁজ খবর নিতেন। শেখ হাসিনা তাঁর মাধ্যমেই দলের করণীয় সম্পর্কে বার্তা দিতেন।

দলে অনাদরে, অবহেলায় থাকা সাহারা খাতুন এই সময়টাই যেন সবচেয়ে বেস্ত সময় কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে আঁকড়ে রেখেছেন। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। ভাবেনও নি কখনো। রাজনীতি করেছেন আদর্শের জন্য এবং জনগণের কল্যাণের জন্য, পেয়েছেন নেত্রীর ভালোবাসা। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিয়ে বসেননি কখনো। কখনো ‘মুল্যায়ন’ হলো না ভেবে হা-হুতাশও করেননি।

সাহারা খাতুন আলোচনায় আসেন ৮০র দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে লড়াকু সৈনিক হিসেবে। হরতাল, অবরোধে সবার সামনে থাকতেন। পিকেটিং করতে যেয়ে পুলিশের মার খেতেন। ৯১ এর উপ নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে খুব অল্প ভোটের বেবধানে তাকে পরাজিত করা হয়েছে, মনোনয়ন পাননি ৯৬ এবং ২০০১ এর নির্বাচনেও। কিন্তু তার মিষ্টি হাসিটা কখনো ম্লান হয়নি। কাজ করে গেছেন দলের জন্য। নেত্রীর কথা অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে আদর্শিক দায়িত্তে পালন করেছেন । ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের আগেও উত্তাল আন্দোলনে সাহারা ছিলেন বীরের মতোই। পুলিশের লাঠি পেটা, নির্যাতন কোনো কিছুই তাঁকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনের পর সাহারা খাতুন তাঁর জীবনে প্রথম ‘বসন্তকাল’ দেখেন। ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহন করে তিনি লক্ষাধিক ভোটের বেবধানে জয়ী হন। তাঁকে করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সৎ, একনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক কর্মীর এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?

সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কতটা সফল, কিংবা ব্যর্থ-তার বিচার করবে ইতিহাস। পুলিশ বাহিনির প্রায় সিংহভাগ সফলতা এবং উন্নয়নের সময় ছিল এডভোকেট সাহারা খাতুনের মন্ত্রিত্বকালীন অবস্থায়।  পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সর্ব প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, এবং সুশাসনের মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম নায়ক এডভোকেট সাহারা খাতুন। পুলিশ বাহিনির যে অর্জন রয়েছে ইতিহাসের পাতায় সেই উন্নয়নের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর