রাজাকার কন্যা এবার মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামায়াত সম্পৃক্ততায় মহিলা আওয়ামী লীগের জেলা শাখা থেকে বাদ পড়ার চার মাস পরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলেন রিজিয়া রেজা চৌধুরী নদভী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বাঁশখালী থেকে একাধিকবার জামায়াতের এমপি প্রার্থী মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে। এছাড়া তিনি নিজেও ২০০২-০৪ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি ছিলেন- বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রিজিয়ার স্বামী চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। যার বিরুদ্ধেও রয়েছে জামায়াত ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। একই আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন মুমিনুল হক চৌধুরী, পরবর্তীতে তিনি বাঁশখালী আসনেও জামায়াতের পক্ষে নির্বাচন করেন।

চট্টগ্রাম কলেজে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থায়ও রিজিয়া যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখন সাতকানিয়া-লোহাগড়া আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর স্ত্রী। নদভী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন।

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রিজিয়ার নাম আসার পর সমালোচনার মুখে পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

ওই সম্মেলনের অতিথি মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন পরে বলেন, ‘আমরা তো চট্টগ্রামের অনেক কিছুই জানি না। শুধু নাম ঘোষণা করেছি। তবে সংগঠনের নেত্রীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে শনিবার সাফিয়া খাতুনের (বর্তমান সভাপতি) নেতৃত্বাধীন মহিলা আওয়ামী লীগের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন রিজিয়া রেজা। জেলা ডিঙিয়ে এবার ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার পরও সমালোচনা এসেছে খোদ সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক তৌফিদুল ইসলাম বুলবুল এ বিষয়ে রোববার ফেসবুকে কয়েকটি ছবি দিয়ে লেখেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মজলিশ শুরা সদস্য জামায়াতের রোকন (মুমিনুল হক চৌধুরী) মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী মামলার ফাঁসির রায়ে দণ্ডিত, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামি ও বদর কমান্ডার মুজাহিদির গায়েবেনা জানাজার ইমাম। বাঁশখালী আসন থেকে বার বার দাঁড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচন করা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া নদভী। যিনি ছাত্রী সংস্থার নেত্রী। তিনি এখন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিঠির সদস্য, রিজিয়া নদভী ,!!!!!’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে সাফিয়া খাতুনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায় নি।

অন্যদিকে রিজিয়া রেজার বাবার রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক। রোববার তিনি বলেন, রিজিয়া এখন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে পাস করা সাংসদের স্ত্রী। রিজিয়ার বর্তমান পরিচয় বিবেচনা করে আমরা তাকে পদ দিয়েছি। সে আগে কার মেয়ে ছিল, সেটা কি আর এখন আছে, এখন সে আমাদের এমপির বউ।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনার বিষয়ে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘এতবড় কমিটি, ১৫১ জনের। সেখানে কারো পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। কারো ভাল না লাগলে সে ফেসবুকে লিখতেই। আমি এখনো কিছু শুনিনি, কেউ আমাকে ফোন করে কিছু বলেনি; আপনিই প্রথম ফোন করলেন।’

তিনি বলেন, ফেসবুকে অনেকে অনেক কিছু লেখে। সবকিছু কি সঠিক? আর সবকিছু গুরুত্ব দিলে হবে? এতবড় সংগঠন, এতকিছু নিয়ে চলা যায়? কিছু তো ভুল-ক্রুটিও হতে পারে।

মাহমুদা বেগম বলেন, নদভী সাহেব এমপি হলে জামায়াতের বিষয়টি স্পর্শকাতর হয় না, মেয়ে হলেই স্পর্শকাতর হয়ে যায়! উনার স্বামী আমাদের দলের রাজনীতি করেন, তো সংসারের স্ত্রীকে আমরা ফেলে দিতে পারি? আর উনি তো বাপের বাড়ি থাকেন না, থাকেন স্বামীর বাড়ি।

গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণের কমিটিতে প্রথমে আসার পর তার জামায়াত পরিচয় নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টির হলে রিজিয়া বলেছিলেন, আব্বা যেহেতু জামায়াত নেতা, তাই এখন আমাকে কালার করার চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে কি আমাকে পদ দিত?

ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়। এরপর রাজনীতি করার সময়-সুযোগ ছিল না। বাবার দিকে না গিয়ে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি।

স্বামী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর সঙ্গে রিজিয়া নদভী

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর