ঢাকার চারপাশ ঘিরে আস্তানা গাড়ছে জঙ্গিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজধানী ঢাকার চারপাশ ঘিরে জঙ্গিরা শক্ত আস্তানা গড়ে তুলেছে। ছদ্মবেশে দাওয়াতি কার্যক্রমের পাশাপাশি বড় হামলার পরিকল্পনায় অস্ত্র গোলাবারুদের মজুদ করছে। এক্ষেত্রে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার ও কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন এলাকাকে তারা বেছে নিচ্ছে।

ঘনবসতিপূর্ণ, নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করছেন এবং কম ভাড়ায় বাসা পাওয়া যায় এমন এলাকাগুলো তাদের পছন্দ। আড়াই বছর ধরে এসব এলাকায় জঙ্গিরা বাসা ভাড়া নিয়ে নাশকতা ও হত্যামিশন বাস্তবায়নসহ ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ করে আসছে। তাছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে বাড্ডা, মিরপুর, ডেমরা এবং যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকাকেও জঙ্গিরা নিরাপদ মনে করে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে এসব এলাকা থেকে জঙ্গি আস্তানাসহ ১৯ নব্য জেএমবির সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। আটকদের মধ্যে নব্য জেএমবির সারোয়ার তামিম গ্রুপের শরিয়া বোর্ডের আমির শায়খ মামুনুর রশিদ ওরফে শায়খ মামুন রয়েছেন। তাকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। পাশাপাশি এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়।

রাজধানীর উপকণ্ঠে আস্তানা গাড়ার কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, গোয়েন্দা নজরদারি কম থাকা এবং খুব সহজে ঢাকায় যোগাযোগ রক্ষা করা যায় বলে জঙ্গিরা এসব এলাকা বেছে নেয়। বিভিন্ন সময় আটক হওয়া জঙ্গিরাও এমন তথ্য দিয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর উপকণ্ঠের মধ্যে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় গার্মেন্টসকর্মীরা বেশি থাকেন। অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহজেই নজর এড়ানো যায়। অনেক সময় জঙ্গিরা গার্মেন্টসকর্মী সেজেও বাসা ভাড়া নেয়।

দেখা গেছে, অনেক জঙ্গিই হকার সেজেও তারা তাদের কার্যাক্রম পরিচালনা করতো। দিনের বেলাতে হকার আর রাতে গোপন মিটিং এ রকমভাবেই চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। বিগত বছরে আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আটক জঙ্গিরা হকার হিসেবে কাজ করতো। আটকদের অনেকেই হকার ছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়াও পুলিশ চেকপোস্টে হামলাকারী জঙ্গিরা ছিল গার্মেন্টসকর্মীর ছদ্মবেশ ধরেছিল।

রযা্ ব সূত্র জানায়, গত দুই মাসে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৯ জঙ্গিকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে গত ১২ জুন ডেমরা থেকে নব্য জেএমবির সারোয়ার – তামিম গ্রুপের শরিয়া বোর্ডের আমির শায়খ মামুনুর রশিদ ওরফে শায়খ মামুনকে আটক করা হয়।

সর্বশেষ, ১৬ জুলাই গাজীপুরের আশুলিয়ার নয়ারহাট চৌরাপাড়ায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে র‌্যাবের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। র‌্যাব সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দিলে বিকেল ৩টার পর তারা আত্মসমর্পণ করে। মোট চারজন আত্মসমর্পণ করেন। আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ দুটি বিদেশি পিস্তল, গুলি জব্দ করা হয়। আটক সন্দেহভাজন জঙ্গিরা রাস্তার ফুটপাতে ফলের ব্যবসা, গার্মেন্টসকর্মী এমনকী কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতো বলে জানা গেছে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ঢাকায় এখন সুযোগ কম। ব্যাপক নজরদারি ও ব্লক রেইডের কারণে জঙ্গিরা রাজধানীতে সুবিধা করতে পারছে না। এ কারণে তারা এর আশপাশের এলাকাকে বেছে নিয়েছে। তবে রাজধানীর উপকণ্ঠে যাতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত অভিযান চলছে এবং আটকও হচ্ছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় জঙ্গিরা যেন আস্তানা গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। জঙ্গিরা সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে নানা কৌশল ব্যবহার করে। এ কারণে তারা তাদের স্থানও বেছে নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে যে স্থান তাদের প্রয়োজন, তারা তাই করে। গাজীপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জ অনেক এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ।এ সব এলাকায় গার্মেন্টসকর্মীরা বেশি থাকেন। অনেক সময় জঙ্গিরা তাদের সঙ্গে মিশে নিজেদের কার্যক্রম চালায়।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকাই নয়, কাউন্টার টেররিজম যখন যেখানেই তথ্য পাচ্ছে, সেখানেই ছুটে যাচ্ছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, রাজধানীর আশপাশের অনেক এলাকায় জঙ্গিরা কম টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলে। এ বিষয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। তথ্য পেলেই চালানো হচ্ছে অভিযান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর