প্রধানমন্ত্রীর এপিএস এবং খালেদা জিয়ার পুত্রবধূও সম্ভাব্য প্রার্থী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। আরেকজন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছে দু’জনেরই নাম।
আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান শিখরের বাবা আছাদুজ্জামান মাগুরার সাবেক এমপি। জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি। বিএনপির সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথির স্বামী আরাফাত রহমান কোকো।

শিখর ও সিঁথির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও তাদের ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। অবশ্য এই দুই রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরাও নেতাকর্মী এবং ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রে তদবির চালানোর পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যেও রয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী। মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ মজবুত। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালের পর থেকে চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আবদুল ওয়াহহাব। মাগুরা-১ আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য মর্যাদার। বিএনপির জন্য পুনরুদ্ধারের। এই আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ-উল-হকও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিয়মিতভাবেই মাগুরায় আসছেন। পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। সভা-সমাবেশ করছেন।
সাইফুজ্জামান শিখর জানিয়েছেন, মাগুরার মানুষ তার বাবা আছাদুজ্জামানকে দফায় দফায় এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। এ কারণে মাগুরার মানুষের প্রতি তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনিও মাগুরার উন্নয়নে শামিল হয়েছেন। আগামী দিনে মাগুরার মানুষের কল্যাণ শতভাগ নিশ্চিত করতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাইছেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাকে ব্যাপক সহযোগিতা করছেন। শিখরের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের নেতৃত্বের পুরোভাগে নিয়ে আসছেন। শিখরও তরুণ। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলে মাগুরা-১ আসনে সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পেরোবে আওয়ামী লীগ।

এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথির নাম এখনও ফলাও করে চাউর হয়নি। তবে তাকে ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস রয়েছে। তাদের ভাষায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিই আওয়ামী লীগকে মোকাবেলায় বিএনপির যোগ্য প্রার্থী। সিঁথির মামার বাড়ি মাগুরার লক্ষ্মকন্দর গ্রামে। তার জন্ম এবং ছোটবেলায় বেড়ে ওঠাটাও মামার বাড়িতে। তার মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী মাগুরা জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক। ভাগ্নি সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথির সম্ভাব্য প্রার্থিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, সিঁথির প্রার্থিতার বিষয়টি দলীয় ও পারিবারিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। সিঁথি প্রার্থী হলে দলের সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা তাকেই সমর্থন দেবেন। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিঁথির পক্ষে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন। ফলে এই আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত হবে। অবশ্য সিঁথির মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলীও মাগুরা-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আলী করীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সিঁথির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি। সিঁথির এক স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিঁথির সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, প্রার্থিতার বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে সিঁথির কথা হয়েছে। সিঁথি তাকে জানিয়েছেন, রাজনীতি তার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। এখন আগে তিনি তার দুই সন্তানকে মানুষ করতে চান। সন্তানরা বড় হলে এবং তারা চাইলে তিনি রাজনীতিতে আসবেন। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেছেন, সিঁথিই মাগুরা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও প্রথম যুগ্ম আহ্বায়কও প্রায় একই কথা বলেছেন।

এদিকে মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আবদুল ওয়াহহাব প্রায় নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করছেন। তিনি সমকালকে বলেছেন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছেন। আগামীতে মাগুরায় রেল, ইপিজেডসহ বড় বড় উন্নয়ন কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। আর এলাকার উন্নয়ন কাজ আদায় করে আনার ক্ষমতাও রয়েছে তার। এ কারণে তার প্রত্যাশা, তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। দলের অনেকের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, তার সঙ্গে কারোর কোনো দূরত্ব নেই। তিনি অভিনয়ে বিশ্বাসী নন। কাজে বিশ্বাসী। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন: জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ও শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুবুত উল্লাহ হোসেন মিয়া।

অন্যদিকে, মাগুরা-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সিঁথির পাশাপাশি প্রায় হাফ ডজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। সবাই মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ, মাগুরা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল আকতার খান কাফুর, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন খান।

কবীর মুরাদ তার প্রার্থিতার ব্যাপারে বলেছেন, বিএনপির চরম দুঃসময়ে তিনি আট বছর মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনও তিনি দেড় ডজনেরও বেশি মামলার আসামি। এসব কারণে দল তাকে মূল্যায়ন করবে। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী। তিনি বলেছেন, দলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে দলের দুঃসময়েও তিনি নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাঠপর্যায়ে দল গোছাচ্ছেন। নিশ্চয়ই মনোনয়নের বেলায় দল তা বিবেচনায় আনবে।

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় তিনিই দলের মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার। আহসান হাবিব কিশোর বলেছেন, করপোরেট রাজনীতিকরা বিএনপিতে এসে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। অথচ তার মতো অনেকেই শত বাধার পরও মাঠে-ময়দানে বিএনপির রাজনীতি করছেন। এ কারণে মাঠের কর্মী হিসেবে তিনি দলের মনোনয়ন পেতে পারেন।
বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালে মাগুরার মঘির ঢালে পেট্রোল বোমায় পাঁচ শ্রমিক হত্যা মামলার আসামি মনোয়ার হোসেন খান সিঙ্গাপুর থেকে মোবাইল ফোনে বলেছেন, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়েছেন। তাই দল তাকে মূল্যায়ন করবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা, জেলা জাসদের সভাপতি (বাদল-আম্বিয়া) এটিএম মহব্বত আলী, গণফোরামের জেলা সভাপতি ডা. মিজানুর রহমান ও ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী ফিরোজের নাম শোনা যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর