পুরনো গাড়ি কেনার আগে…

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নিজের একটি গাড়ি থাকার শখ কমবেশি সবারই আছে। কিন্তু সবারতো আর নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ্য থাকে না। তবুও সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে থেকে পুরাতন গাড়ি কেনার পেছনে ছুটেন অনেকেই। নির্ভাবনাময় ভ্রমণ এবং দুই দিন পর পর ঠিক করার পিছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করার ঝামেলা থেকে বাঁচতে চাইলে পুরনো গাড়ি কেনার আগে জেনে নিন দুর্দান্ত ও গুরুত্বপূর্ন টিপস। প্রস্তুতিঃ পুরনো গাড়ি কেনার আগে ঠিক করুন কী ধরনের গাড়ি কিনবেন।গাড়ির খোঁজা শুরু করার আগে ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন আপনার কী ধরনের গাড়ি পছন্দ। কারণ গাড়ি ভেদে গাড়ির যাচাই প্রক্রিয়াও ভিন্ন। উদাহরনস্বরূপ- মাঝারী আকারের সেডান গাড়ি এবং স্পোর্ট কার এর যাচাই প্রক্রিয়া ভিন্ন রকম। কী ধরনের গাড়ি দরকার সেটা ঠিক করার পর জেনে নিন আপনার বাছাইকরা মডেল এ সাধারনত কী ধরনের সমস্যা থাকে। এটা পরবর্তীতে গাড়ি পরীক্ষা করার সময় অনেক কাজে দিবে। বডির অবস্থাঃ গাড়ির চারদিকে হাটুন এবং কোথাও কোন দাগ, আচর, এবং জং আছে কিনা ভাল ভাবে লক্ষ্য করুন। ছোট খাট দাগ বা আচর কোন সমস্যা নয় কিন্তু এই তিনটা জিনিস যদি বেশি জায়গা জুড়ে থাকে তাহলে বুঝবেন গাড়িটি খুব অবহেলার সাথে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া গাড়ির বডি প্যানেলগুলোও ভালভাবে পরীক্ষা করবেন। বডি প্যানেল যদি সমান না থাকে তাহলে বুঝতে হবে গাড়ীটি পূর্বে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। হুড, ট্রাংক এবং সবগুলো দরজা সহজে খোলা বা বন্ধ করা যায় কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। টায়ারঃ গাড়িটি কতদিন ধরে চলছে তা টায়ার দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। দেখে নিন সবগুলো টায়ার একই ব্র্যান্ড এর আছে কিনা। যদি না হয় তাহলে এটিও এক ধরনের সমস্যার লক্ষন। এক্ষেত্রে বিক্রেতার সাথে আলাপ করে এসম্পর্কে জেনে নিন। প্রত্যেকটি টায়ার আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা করে দেখুন টায়ারে কোন ফাটল, আঁচড় বা এই ধরনের সমস্যা আছে কিনা। টায়ারগুলো কী রকম ক্ষয় হয়েছে সেটাও লক্ষ্য করবেন। বেশী ক্ষয়ে গেলে জেনে রাখবেন কেনার পরে দ্রুতই আপনাকে টায়ার পাল্টাতে বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করবেন টায়ার নিয়মিত ঘুরানো হয় কিনা। এছাড়া টায়ারের খাজ গুলো সমান আছে কিনা সেটাও ভালভাবে দেখে নিন। বাতিঃ বিক্রেতা অথবা আপনার সাথে কেউ থাকলে থাকে গাড়ির ভিতরে গিয়ে বাতিগুলোজ্বালাতে বলুন এবং নিশ্চিত হয়ে নিন সবগুলো বাতিই জ্বলছে। পিছনের রিভার্স, সিগনাল, এবং হাই বিম এর বাতিগুলোও পরীক্ষা করতে ভুলবেন না। বাতির সামনের কাচে কোন ফাটল আছে কিনা বা ঝাপসা দেখা যায় কিনা সেটাও দেখে নিবেন। গন্ধ পরীক্ষাঃ দরজা খুলে যখন গাড়ির ভিতরে দেখবেন তখন গাড়ির ভিতরে গন্ধ শুকে লক্ষ্য করবেন কোন ধরনের ছাতা পড়া গন্ধ নাকে লাগছে কিনা। যদি পান তাহলে বুঝবেন গাড়িতে কোন ফুটো আছে যেটা দিয়ে ভিতরে পানি আসে। সেক্ষেত্রে নিচের কার্পেট এর ওপর হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন কোন ভেজা জায়গা পাওয়া যায় কিনা। ট্রাংকের ক্ষেত্রেও এই একই কাজ করুন এবং যদি কোন গন্ধ অনুমান করেনতাহলে ট্রাংক এর মাদুর সরিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন। সীটঃ গাড়ির সবগুলো সীট ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখে নিন কোথাও ছেড়া বা ফাটা আছে কিনা। সীটগুলো ইলেকট্রিক বা ম্যানুয়েলে নিয়ন্ত্রন হয় কিনা এবং ভালভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায় কিনা ভালভাবে দেখে নিবেন। এছাড়া নিশ্চিত হয়ে নিন যে ড্রাইভিং এর জন্য সঠিক অবস্থানে বসা যায় কিনা। ইনস্ট্রুমেন্টঃ ইগনিশন সুইচ এক্সেসরি মোডে নিয়ে যান। ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার এর সবগুলো লাইট কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে চালু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর গাড়ি চালু করুন। যদি কোন সতর্কতামূলক বাতি জ্বলতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে কোন ত্রুটি আছে যেটা ঠিক করা প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রনঃ গাড়িটি চালু করুন এবং সবগুলো সুইচ এবং বোতাম চেপে দেখুন সেগুলো ঠিকমত কাজ করছে কিনা। যদি হীটার এবং এয়ার কন্ডিশনার কাজ করে তাহলে ক্লাইমেট কন্ট্রোল সিস্টেমটাও পরীক্ষা করে দেখুন। আর অডিও সিস্টেমটাও পরীক্ষা করতে ভুলবেন না। ছাদঃ সানরুফ অথবা জানালা দিয়ে পানি আসতে পারে এমন কোন ছিদ্র আছে কিনা সেজন্য হেডলাইনার এবং ট্রিম পরীক্ষা করে দেখুন। বেল্ট এবং হোসঃ রেডিয়েটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির আশেপাশের হোস গুলোতে কোন ফাটল বা ছিদ্র আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করুন। ড্রাইভ বেল্টে কোন ছেড়া ফাটা আছে কিনা ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখে নিন। রেডিয়েটরঃ রেডিয়েটরের সাথে যে প্লাস্টিকের জলাধারটি রাবার হোসের মাধ্যমে সংযুক্ত করা থাকে সেটি খুজে বের করুন এবং লক্ষ্য করে দেখুন এটি সবুজ অথবা কমলা রঙ এর কিনা। বিবর্ন অথবা দুধের মত রঙ হলে বুঝতে হবে রেডিয়েটরে সমস্যা আছে। রেডিয়েরটিও পরীক্ষা করে দেখুন। কোন সবুজ অথবা কমলা দাগ থাকলে বুঝতে হবে রেডিয়েটরে ছিদ্র আছে। তরলঃ চার ধরনের তরল পদার্থ আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে। সেগুলো হল – তেল, ট্রান্সমিশন, পাওয়ার স্টিয়ারিং, এবং ব্রেক। কীভাবে তরল পরীক্ষা করতে হবে সেটি গাড়ির নির্দেশিকা থেকে দেখে নিন। তেল গাড় বাদামী অথবা কাল রঙের হতে হবে। যদি হলুদাভ রঙের হয় তাহলে বুঝতে হবে তেল কয়েক দিন আগে পালটানো হয়েছে। মাপকাঠিতে লেগে থাকা তেলে যদি পানির ফোটা কিংবা ফেনা থাকে অথবা ধূসর বর্নের হয় তাহলে বুঝতে হবে গাড়ীর গেস্কেটে সমস্যা আছে অথবা ইঞ্জিনের কোন অংশে ফাটল আছে যা মারাত্নক সমস্যার বিষয় এবং ঠিক করাও অনেক ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। ট্রান্সমিশনের তরল গোলাপী বর্ণের হতে হবে এবং তেলের মত ঘ্রান থাকবে। রঙ যদি বাদামী বর্ণের হয় এবং পোড়া গন্ধ আসে তাহলে বুঝতে হবে ট্রান্সমিশনে সমস্যা আছে। ধাতব অংশগুলোর মধ্যে ট্রান্সমিশনের তরল অথবা তেল লেগে থাকাও সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। ব্রেক এবং পাওয়ার স্টিয়ারিং এর তরলও সঠিক স্তরে থাকতে হবে। গাড়ির নিচের দিকে তাকিয়ে অবশ্যই দেখে নিবেন কোন ছিদ্র দিয়ে তরল পড়ছে কিনা। পরীক্ষামূলক ড্রাইভিংঃ এটা হচ্ছে গাড়ি পরীক্ষা করার একটি গুরুত্বপূর্ন প্রক্রিয়া। যখন গাড়িটি চালু করবেন তখন লক্ষ্য রাখবেন এটি চালু হতে কত সময় নেয় এবং বাজে কোন শব্দ আসে কিনা। গাড়িটিকে অবশ্যই ভিন্ন ধরনের রাস্তায় এবং গতি উঠা নামা করে চালিয়ে দেখবেন। স্টিয়ারিং হুইল অথবা সামনের দিকে কোন শব্দ, কম্পন বা ঝাকুনি অনুভূত হয় কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সহজে ট্রান্সমিশন পালটানো যায় কিনা এবং ভালভাবে ব্রেক করা যায় কিনা ভালভাবে পরীক্ষা করবেন। কাগজপত্র এবং মেকানিকের মতামতঃ আপনি যদি কোন ব্যক্তিগত বিক্রেতার কাছ থেকে গাড়ি কিনতে চান তাহলে অবশ্যই গাড়ির কাগজপত্র (যেমন- নাম এবং রেজিষ্ট্রেশন) বিক্রেতার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর সাথে মিলিয়ে দেখুন। যদি নাম না মিলে তাহলে আপনি দালালের খপ্পড়ে পড়েছেন এবং আপনার দ্রুত স্থান ত্যাগ করা উচিত। কেনার চুক্তি পাকাপাকি করার আগে অবশ্যই গাড়ির আইডি নাম্বার এবং গাড়ির হিস্টোরি রিপোর্ট দেখে নিতে ভুলবেন না। বেশীরভাগ ডীলারই পুরনো গাড়ির সাথে এই ধরনের কাগজ পত্র দিয়ে থাকে। এছাড়া, কেনার আগে কোন বিশ্বস্ত ওয়ার্কশপ থেকে অবশ্যই গাড়িটি পরীক্ষা করে নিবেন। মেকানিককে বলুন গাড়িটি ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে এবং গাড়ির সকল ত্রুটি ও সেগুলো ঠিক করার জন্য কীরকম খরচ পড়বে তার একটি লিখিত তালিকা তৈরী করে দিতে। কোন বিক্রেতা যদি গাড়ি পরীক্ষা করতে দিতে অসম্মতি জানায় তাহলে তার কাছ থেকে গাড়ী কেনার কথা মোটেও ভাববেন না। ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর