একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রবীণদের ধাক্কা দিতে নবীনরা মাঠে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছেন বেশ আগ্রহের সঙ্গে। বিশেষ করে, দলের মনোনয়ন আগ্রহী নবীন প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান সরকারের নানানমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্যে রাখছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনারে।

অপরদিকে, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা নিজেদের কর্তব্যের নজরদারি না বাড়ালেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় দল থেকে মনোনয়ন পেতে সবর হচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। তবে সর্বশেষ, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী ‘হেভিওয়েট’ অনেক এমপি-মন্ত্রীও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ছিটকে পড়ছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় এক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রত্যেক আসনে তিন জন করে প্রার্থী বাছাই করছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যেক আসন থেকে তিন জন প্রার্থীর নাম বাছাই করার কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। তার সঙ্গে দলটির কতিপয় নেতাকেও এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্যর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেতাদের ভালো-মন্দ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যও আমলে নেওয়া হচ্ছে বাছাই প্রক্রিয়ায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

দলটির নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছেন। কিভাবে এলাকার মানুষের মন জয় করা যায়, দলীয় নেতাকর্মীদের তুষ্ট করা যায়, তার জন্য সবই করছেন মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা। নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। সময় কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষের সঙ্গে। রাজধানী বা অন্যান্য শহরে বসবাসরত এসব নেতা সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নবীন প্রার্থী কমপক্ষে অর্ধশতাধিকের বেশি রয়েছে। যারা ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়ে উঠেছেন। তারা এলাকার মানুষের আপদ-বিপদে সাড়া দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।

এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২)।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি) আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। এলাকাসূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা দলের প্রার্থী হিসেবে আবদুস সবুরকে চাইছেন। আবদুস সবুর বলেন, এ আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে, ভৌগোলিক দিক থেকে আমি ভালো অবস্থানে আছি।

ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩)। সুজিত রায় নন্দী বলেন, আমি জনগণের বিপদে-আপদে তাদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। তবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়টি সম্পূর্ণ এখতিয়ার হচ্ছে মনোনয়ন বোর্ডের। নেত্রকোনা থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট থেকে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ।

কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (চট্টগ্রাম-৬)। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক দল থেকে মনোনয়ন পেতে নিজের মাঠ গোছাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন তিনি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য খন্দকার হামীম কায়েস বিপ্লব টাঙ্গাইল -৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর), যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪), কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১)।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর)। এলাকাবাসীদের জোরালো দাবি তারা এই আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চান একজন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। মোর্শেদ কামাল বলেন, দলীয় সভাপতি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে নবীনগরবাসীদের গড়ে তুলতে চেষ্টা করব।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জোবায়দুল হক রাসেল পটুয়াখালী-২ (বাউফল)। তিনি বলেন, যারা দলের দুর্দিনে আন্দোলন-সংগ্রমে মাঠ কাঁপিয়েছেন এমন তরুণদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হোক। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক নুরজাহান আক্তার সবুজ শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা), সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক শৈলক (ঝিনাইদহ-১)। সাবেক সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম মানিক পাবনা সদর (পাবনা-৫)। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম নাসিরনগর (বি.বাড়িয়া-১)।

ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান (নরসিংদী-৫)। তরুণ নেতা হিসেবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা আছে। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। দলীয় প্রধান চাইলে আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শ. ম. রেজাউল করিম, কৃষক লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ কে এম আজম খান ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিক সাজ্জাদ হোসেন বাদশা ফিরোজপুর-১ আসনে নিয়োমিত মাঠ চষছেন। আজম খান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), সাফিয়া রহমান (রংপুর-৩), রাশেক রহমান (রংপুর-৫), সাবেক যুবলীগ নেতা জনবন্ধু এম এ হান্নান বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)। হান্নান বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আমি দৃঢ় আশাবাদী। অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল কাফী মাগুরা-২, পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১)।

কেরানিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ (ঢাকা-২)। এ আসনে শাহীন আহমেদের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেশি বলে দলীয় এক সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানার সভাপতি মিরাজুর রহমান সুমন বলেন, দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঢাকা-২ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীন আহমেদের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান (ঢাকা-১৩), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের সভাপতি আবদুস সালাম বাবু (ঢাকা-৪)। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাউসার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন সম্রাট (ঢাকা-৮)। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এক সূত্রে জানা গেছে, শাহে আলম মুরাদ এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুর রহমান মানিক (ঢাকা-৭)। এলাকা সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সংরক্ষিত আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মহিলা যুবলীগের সভাপতি সাবিনা আকতার তুহিন (ঢাকা-১৪)। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মঈনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল (ঢাকা-১৫)।

মঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তারই কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছি।

এম সাইফুল্লাহ সাইফুল বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে অবশ্যই পাশ করব।

এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ঢাকা-১৬ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর