শিক্ষার্থীদের কৃষি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার আহ্বান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  শহরের গণ্ডির মধ্যে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের মাটির সংস্পর্শহীনতায় শঙ্কা প্রকাশ করে তাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষিকাজের বিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা অন্ধ (বাস্তবতা বিবর্জিত) হয়ে যেন না থাকে সে বিষয়টাতে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধান কাটে বা ধান লাগায় এমন মওসুমে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের গ্রামে সেই ধানক্ষেতের পাশে তাদের নিয়ে যাওয়া উচিত। ছোটবেলা থেকেই তাদের বোঝানো উচিত এই দেশটা কিভাবে চলছে, খাদ্য কিভাবে আসছে।’

আজকাল শহরে যেসব ছেলে-মেয়ে মানুষ হয়, তাদের অনেকে এসব সম্পর্কে জানতেও পারে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি না একদিন তারা হয়তো প্রশ্ন করবে-ধান গাছে তক্তা হয় কি না।

দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন আধুনিক বিশ্বের অনেক ছেলে-মেয়েকে কোন ফল খাওয়া অবস্থায় এই ফলটা কোথায় পাওয়া যায়? জিজ্ঞেস করলে, সে বলবে সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়। কোথায় উৎপাদন হয়েছে-এই বিষয়টিই তার মাথায় নেই।

রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১ এবং ১৪২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের কৃষি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে।

১০টি শ্রেণিতে ৫টি স্বর্ণ, ৯টি রৌপ্য এবং ১৮টি ব্রঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ নির্মিত পদক, নগদ অর্থের চেক এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং পুরস্কার বিতরণী পর্বটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনৈতিক ও  উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মৌসুমে যেসব ফলমূল  পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে প্রত্যেক ঋতুতেই দেশজ নতুন যেসব ফল রয়েছে সেসব খেলে সে সময়কার বিভিন্ন রোগব্যাধী থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হয়, সেসব রোগ ব্যাধির জন্য প্রতিরোধক শক্তি এসব ফলমূলে রয়েছে।

সঠিক সময়ে যথাযথ গবেষণালব্ধ উদ্যোগ গ্রহণে সক্ষম হওয়ায় দেশে দুধ, মাংস ও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেড়ার পশমের সঙ্গে পাটের সূতার মিশ্রণে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর জন্য আমি বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ ইনস্টিটিউটকে (বিএলআরআই) ধন্যবাদ জানাই। তারাই গবেষণা করে এটা বের করেছেন। কম্বল থেকে শুরু করে নানা সাংসারিক জিনিস এমনকি স্যুটের কাপড় পর্যন্ত তারা তৈরি করতে পারছেন। তাদেরকে এখন সুযোগ দিতে হবে এগুলো ভালোভাবে বাজারজাত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু দানাদার ফসল নয় আলু, সবজি, ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের মাটি এত উর্বর যে কারণে যেকোনো একটা কিছুর উদ্যোগ নিলেই কিন্তু সেটা উৎপাদন করতে পারি। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম, আলু আমরা বিদেশেও রপ্তানি করছি। উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানি এবং শিল্প খাতে ব্যবহারে আমরা ২০ শতাংশ হারে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে গবেষণা করে নতুন জাতের ফল উৎপাদন করা হচ্ছে।

তিনি উদাহরণ দেন-স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুট, আঙুর, মাশরুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছু আমরা উৎপাদন করছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর