আঙ্গুর আর পীচ ফলের দেশে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সত্যি দেখার মত একটা জেলা জাপানের ইয়ামানাসি। চারদিকে সাঝানো-গোছানো পাহাড় আর পর্বতমালা। সবকিছুই যেন নিজেরমত করে প্রযুক্তি দিয়ে সাঝিয়ে নিয়েছে। টোকিও থেকে বাসে বা ট্রেনে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ। কখনো পাহাড় কখনো পর্বতের নিচ দিয়ে আবার কখনো পাহাড়ের ভাজেঁ ভাজেঁ বিশাল বিশাল রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। জাপানে গ্রাম আর শহর সব একই রকম। একই সুযোগ সুবিধা। গাড়ির দেশে রাস্তারও কোন অভাব নেই। দেখলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কত শত বছরে এসব তৈরী করেছে কে জানে! আসলে জাপানে যা দেখি তাতেই অবাক হই। এর পেছনে অবশ্য রয়েছে সততা-আন্তরিকতা আর কঠোর পরিশ্রম। তাদের সততা আর পরিশ্রমকে কোন সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। যাক এ বিষয়ে অন্যকোন দিন বলার চেষ্টা করবো। আজ শুধু আঙ্গুর ফলের বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
ইয়ামানাসি জেলার বিস্তৃত মাঠ আর পাহাড়ের ভাজেঁ ভাজেঁ শুধু আঙ্গুর আর পীচ ফলের চাষ। যতদূর চোখ যায় শুধু আঙ্গুর আর পীচ ফলের বাগান। নানা পদের নানা রকমের নানা সাধের আঙ্গুর। পীচ ফল সম্পর্কে বাংলাদেশী মানুষ অপরিচিত হলেও এটি অনেকটা দেখতে আপেলের মতো। কিন্তু এটি আপেলের চেয়ে নরম, মিষ্টি ও রসালো হয়। স্বাদ আর গন্ধও দারুণ।
আঙ্গুর ফলটি অতি পরিচিত হলেও আমাদের দেশে চাষ হয় না বা চাষযোগ্য না। অবশ্য জাপানের সব এলাকায় কম বেশি আঙ্গুর চাষ হয়। এখানে দেখলাম পুরো জেলাটাই যেন আঙ্গুর ফলের রাজ্য। রাস্তার দুই পাশে আঙ্গুর ফলের গাছগুলো মনে হয় রাস্তা গ্রাস করে ফেলবে! আঙ্গুরের থোপাগুলো অনেক বড় বড়। দেখতেও অসাধারণ। গাছগুলোতে এতো আঙ্গুর ধরে যে কৃষকরা চারভাগের একভাগ আঙ্গুর কেটে ফেলে দেয়। প্রথমে দেখে আমি সত্যি অবাক হয়েছিলাম। এতো সুন্দর আঙ্গুর কেটে ফেলে দিচ্ছে! আর আমরা এ ধরণের আঙ্গুর দেশে চোখেও দেখি না! ছাটাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু আঙ্গুর ফেলে দেয় যাতে গাছে থাকা আঙ্গুর গুলো আরো রিষ্টপুষ্ট হয়। মজার বিষয় হলো সখ করে ছেটে ফেলে দেওয়া আঙ্গুরের বেশ কয়েকটি থোপা আমি বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। এখনো পূর্ণতা পায়নি। টস টসে কাঁচা। বেশ টক। মনে মনে ভাবলাম কেটে ফেলে দেয়া এসব আঙ্গুর বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাবসা শুরু করবো কি না! দেখে মন মানে না। এতো আঙ্গুর কেউ কেটে ফেলে দেয়!
যাই হোক জাপানে ১২ মাসই আঙ্গুর চাষ হয়। তবে এখন আঙ্গুরের প্রকৃত মৌসুম। এ আঙ্গুর গুলো আরো প্রায় এক থেকে দেড়মাস পর বাজারজাত করা শুরু হবে। কিছু আঙ্গুর চলে যাবে সুপার শপগুলোতে। কিছু আঙ্গুর দিয়ে তৈরী হবে কিসমিস। কিছু দিয়ে তৈরী হবে জেলি-জ্যাম। আর বাকি টন কে টন আঙ্গুর চলে যাবে বড় বড় নামি-দামি কোম্পানিতে। যেখানে তৈরী হবে ওয়াইন। একটা কথা বলে রাখি জাপানিজরা নরমাল পানির চেয়ে ওয়াইন বেশি পছন্দ করে। পানির চেয়ে ওয়াইনের দামও খুব বেশি না।
আঙ্গুর আসলেই পুষ্টিকর ফল। সুস্বাদু হওয়ায় এ ফলটি সবাই পছন্দ করে। এতে ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ আছে প্রচুর পরিমানে। এছাড়াও অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় ঞযরধসরহ, জরনড়ভষধারহ,ঘরধপরহ, ভিটামিন ই৬, ভিটামিন ই, ঋড়ষধঃব এবং চধহঃড়ঃযবহরপ অ্যাসিড। শরীরের খনিজ উপাদানের চাহিদা মেটাতে এতে আছে- পটাসিয়াম ,ক্যালসিয়াম,এবং ফসফরাস। এছাড়া অন্যান্য খনিজ পদার্থও যেমন কপার, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,সেলেনিয়াম, সোডিয়াম এবং দস্তা অল্প পরিমানে পাওয়া যায়। আঙ্গুর বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে রোগপ্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। হাঁপানি, মাইগ্রেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মতন সমস্যায় এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও এর হাজারো গুনাগুন রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর