মডেল অভিনেত্রী নাকি অন্য কেউ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  আজকাল রূপের জৌলুস নিয়ে অনেকেই মিডিয়ায় ঢুকে পড়ছে। তাদের রয়েছে বিভিন্ন মিশন। তারা শিল্পী পরিচয়ের আগে এক-একজন মডেল, উপস্থাপিকাসহ নানা পরিচয় নিয়ে মিডিয়ায় ঘোরে। কেউবা সিনেমায় ছোট একটি চরিত্র করেছে। তাতেই সে নায়িকা বনে গেল। নিজেকে মিডিয়াকর্মী বলে বেড়ায়।

যেমন রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনে দাওয়াত দিয়ে এক টিভি অভিনেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ৫ জুলাই বনানী থানায় ব্যবসায়ীপুত্র ইভানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ওই কথিত টিভি অভিনেত্রী।

কিন্তু মিডিয়া পাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে কে সেই অভিনেত্রী? তিনি কিসে অভিনয় করেছেন নাটক নাকি চলচ্চিত্রে। নাকি করতেন শুধু মডেলিং? তার নাম কি? তিনি কি আদৌ অভিনেত্রী? এই সব প্রশ্নের উত্তর অভিনয়শিল্পীদের মাথায়ও ঘুরছে।

তাহলে এরা কারা? মিডিয়ার লেবাস গায়ে মাখিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দেহব্যবসা থেকে ইয়াবা ব্যবসা সকল কিছুই আছে।

মডেল সাবিরা
কিছু দিন আগে সাবিরা নামের একজন লিভ টুগেদার করছিল, বনাবনি না হলে আত্নহত্যা। তারপর খোঁজ মিলে তিনি নাকি মডেল ছিলেন। লিভ টুগেদার করতেন এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে। জ্যাকলিন মিথিলা নামে একজন আত্নহত্যা করলেন। তিনি ছিলেন নানা কারণে সমালোচিত।

রেইনট্রি হোটেলে তরুণী ধর্ষণ
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হলো আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত। জানা গেল এসবের নাটের গুরু শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত মুখ নাঈম আশরাফ। মিডিয়ার বেশ কজন মডেল, অভিনেত্রীর সঙ্গে সাফাতের সখ্যের কথাও উঠে এসেছে। আর সাফাতের সঙ্গে সুন্দরী মডেলদের পরিচয় করিয়ে দিতেন নাঈম আশরাফ।

আবু জাফর মোহাম্মদ কার্লোস
সম্প্রতি ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন ‘আবু জাফর মোহাম্মদ কার্লোস নামের এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে জড়িয়ে মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে বেশ কজন মডেল অভিনেত্রীর নাম। অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক কার্লোস। অস্তিত্ব সিনেমা বানানোর পর কার্লোস ঢাকার সিনেমা পাড়ার নামি-দামি নায়িকাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বেনামীদের সঙ্গেও আছে তার গভীর সখ্য।

এসব নায়িকার অনেককে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাতায়াত শুরু করেন। এদের কয়েক জনের সঙ্গে তিনি লিভ টুগেদারও করছিলেন। রাজধানীর পরীবাগের ফ্ল্যাটে চিত্রনায়িকা সাবিনা রিমাকে নিয়ে তিনি লিভ টুগেদারে মেতেছিলেন বছরখানেক ধরে। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস এক্সটেসির মডেল তানভিয়া জামান মিথিলার সঙ্গে তার লিভ টুগেদার চলছিল বলেও জানা গেছে। কার্লোসের সঙ্গে জড়িয়ে মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা, পিয়াসাসহ অনেকের নাম এখন আলেচিত হচ্ছে।

নানা সময়ে আলোচিত এসব অভিনেত্রী বা মডেল কারা? তারা কি সংস্কৃতির জন্য কোনো অবদান রেখেছেন? তাদের আসার পথটাও যেমন কলঙ্কিত করে মিডিয়াকে, তেমনি যাওয়ার পথটাও। কর্মফলে তারা পরিচিত পায় না কখনোই। শুধু অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে সস্তা জনপ্রিয়তা পায়। একটা পোশাকের ফটোশুট। বড় জোর একটা নাটক কিংবা সিনেমা। তা দিয়েই তিনি মিডিয়া কর্মী। আর তাদের পেছনে ছুটছে বিত্তশালীরা। অর্থ আর প্রতিপত্তির লোভে এসব নামহীন মডেলরা যেকোনো কিছু করতে রাজি। মিডিয়াকর্মী ভেবে তাদের কেউ রক্ষা করবে বলে প্রত্যাশা। কিন্তু তাদের দায়ভার কী কেউ নেবে?

যারা মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করছে। তাদের নামে এমন কয়টা অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের একই প্রশ্ন একই উত্তর ‘আমরা যারা শোবিজে কাজ করি তারা একটা পরিবার। আমরা প্রায় সবাইকে সবাই জানি। আমাদের পরিচয় মিলবে শুটিং স্পটে। টেলিভিশন বা সিনেমায় কর্ম দেখে মিলবে। কিন্তু খবরের কাগজে তার অপকর্ম দেখে তো মেলার কথা না। তার কর্মের সঙ্গেই পরিচিত নই। সেখানে কুকর্মের দায়ভার আমাদের নিতে হবে কেন? এমন একটা অবস্থা হয়েছে, মানুষের ধারণা হয়ে গেছে, শোবিজে যারা কাজ করে, তারা সবাই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত!

মিডিয়া কর্মী যেন একটা লেবাস, যেন একটা সাইনবোর্ড। যে কেউ এই সাইনবোর্ডটি ধারন করতে পারে। তারপর সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। একটু খোঁজ নিলেই জানা যায়, এদের একেকজনের বাসা বাড়িই হয় আড্ডাস্থল। সেখানে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য নিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা মাতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা যায় এগুলো স্বেচ্ছায় হয়। খদ্দের জোগার করার জন্য মিডিয়ায় নাম ব্যবহার হয়। নামহীন তৃতীয় শ্রেণির মডেল অভিনেত্রীদের হয়ে যায় গাড়ি, ফ্লাট, বিলাসবহুল জীবন-যাপন। এখানে যে শুধু অপরিচিতরা আছে তা কিন্তু নয়। অনেক পরিচিতরাও আছে।

এরাই হলো বর্তমানের সো কলড সেলিব্রেটি। এদের না নেই পরিবার। না নেই মিডিয়ার জন্য কোনো দায়িত্ববোধ। নিজস্বার্থে এরা নানা অপকর্ম করে বেড়ায়।

কিন্তু তার ফলে কি হয়? শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি মানুষের অবজ্ঞা ধরে গেছে। কোনো শিক্ষিত পরিবার থেকে তার ছেলেমেয়েদের এ মাধ্যমে আসতে দিতে চায় না। শিল্পের জন্য যারা নিবেদিত। তাদের গায়ে কলঙ্ক মাখে। অনেকে বিরক্ত হয়ে এ মাধ্যম থেকে চলে যায়।

আর সংস্কৃতি মাধ্যমের যেসব সংগঠন আছে। তাদের দায়িত্ব কী? তারা কি শুধু দলাদলি আর নিয়ম তৈরি নিয়েই ব্যস্ত থাকবে? তাদের কী কোনো দায়ভার নেই কে সংস্কৃতি কর্মী তকমা লাগিয়ে ঘুরছে। কী অনৈতিক হচ্ছে এ মাধ্যমে। এখনই যদি এর দিকে নজরদারি না শুরু হয়। মিডিয়াকর্মী হিসেবে কেউ গালি দিলে সহ্য করা ছাড়া উপায় কী?

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর