হাওরপাড়ের মৎস্যজীবীদের দুর্দিন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বন্যায় মুখে হাসি ফুটতো তাদের মুখে। এমন দিনে জালে মাছ ধরা পড়তো বেশুমার। ছোট বড় মাছে সয়লাব থাকতো বাজার। হাওর তীরের স্থানীয় বাজারগুলোতে থাকতো জমজমাট কেনা বেচা। কিন্তু ভিন্ন চিত্র এ বছর। জালে মাছ মিলছে কম। রাতদিন মাছ ধরে পরিবারে ভাতের যোগান হচ্ছে না। এ বছর হাওরে যেমন পানি। তেমনি ঘরেও পানি। বানের পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ঠাঁই নিয়েছে ঘরবাড়ি আর হাওরে। তাই হাওর পাড়ের জেলে পরিবারে দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। দিন দিন বেড়ে চলেছে সমস্যা আর সংকট। অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটছে হাওর তীরের জেলে পরিবারের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধান নেই। মাছও কম। সব হারিয়ে নিঃস্ব মৎস্যজীবী মানুষ। এখন মাছের ভরা মৌসুম। কিন্তু জেলেরা জাল ফেলে হচ্ছেন হতাশ। তাছাড়া ভাসমান পানিতে মাছ ধরা নিয়েও রয়েছে নানা বাধা-বিপত্তি। হাকালুকি হাওর পাড়ের মৎস্যজীবী আলী হোসেন মিশিল, কয়েছ আহমদ বটলাই, গুলজার মিয়া, সুধাংশু দেব, লইক মিয়া, তমিজ আলী জানালেন কয়েক দফায় বন্যায় এখন হাওরে দেশি প্রজাতির নানা জাতের মাছ এসেছে। তীরবর্তী গ্রামগুলোর পুকুর ও মৎস্যখামারের মাছ বানের পানির তোড়ে ভেসে হাওরে এসেছে। বিলগুলোতে এখন পর্যাপ্ত মাছ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বিলের সীমানা ৫-১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিধিনিষেধ থাকায় মাছ ধরতে পারি না। আর ভাসমান পানি থাকায় হাওরের তীরবর্তী এলাকায় মাছ মিলছে কম। প্রতিদিনই আগেরমতো জাল নিয়ে ছুটে চললেও তা হচ্ছে অসার। কারণ ৩য় দফা বন্যায় হাওরের তীরবর্তী এলাকায় ভাসমান পানিতে মাছ নেই বললেই চলে। এখন তাদের আয় রোজগারও নেই। তাই পরিবারের খাওয়া বাঁচা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানালেন মড়কের পর হাওর তীরবর্তী এলাকায় জালে মাছ ধরা পড়ছে কম। ৩য় দফার বন্যা আর চলমান বর্ষণে এখন পানিতে টইটুম্বুর হাওর হাকালুকি। অনান্য বছর এ সময় নানা জাতের দেশি প্রজাতির মাছ জালে ধরা পড়লেও এবছর ভিন্ন চিত্র। তারপরও পরিবারের জীবিকার প্রয়োজন, অলস সময় আর নেশার টানে ভাসমান পানিতে জাল ফেলছেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরছেন বাড়িতে। গতকাল সরজমিনে হাকালুকি হাওর পাড়ের জেলে পল্লী হিসেবে পরিচিত সাদিপুর, কুরবানপুর, মিরশংকর, তেঘরিঘাট, আলীনগর, ফতুনগর, শাহপুর ও বেলাগাঁও এলাকায় গেলে মৎস্যজীবীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তুলে ধরেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। জেলে পল্লীর বাসিন্দারা   জানালেন এখন পর্যন্ত তারা সরকারি তরফে কোন উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাননি। অকাল বন্যার পর হাওর পাড়ের মানুষের জন্য ওএমএস বা ভিজিএফের যে ত্রাণ সহায়তা এসেছিল তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল থাকায় ওই সহায়তাও সবার  কপালে জুটেনি। আর গেল কয়েকদিন থেকে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে এলাকার দু’চার পরিবার সরকারি বা বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পায় তা দিয়ে কোন রকম বেঁচে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর