প্রেম-ভালোবাসা ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রেম-ভালোবাসা শ্বাশত সত্য। ভালোবাসা পবিত্র। যার অনুভূতি শক্তি আছে তার মাঝে ভালোবাসা লুকায়িত আছে। সব বিষয়ের দুটি দিক আছে। ১.ভালো ২.খারাপ। ঠিক তেমনিভাবে ভালোবাসারও দুটি দিক আছে। যদি আপনি মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানদের ভালোবাসেন তাহলে পূণ্যের অধিকারি হবেন। আর যদি বেগানা নারীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকে তাহলে গুনাহ হবে।

পাপ-পঙ্কিলতার দরজাগুলো বন্ধ করার জন্য শরিয়ত এসেছে। যা কিছু মানুষের মনোজগৎ ও বিচার-বিবেচনা শক্তিকে নষ্ট করে দেয়ার মাধ্যম তা বন্ধ করার জন্য শরিয়ত সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। আর প্রেম-ভালোবাসা, নর-নারীর অবৈধ সম্পর্ক সব থেকে বড় ব্যাধি। হারাম কাজ।

ইসলামি শরিয়ত এ অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছে। ভালোবাসার সূত্রপাত হয়; চোখের মাধ্যমে দেখার দ্বারা। দেখার পর ভালো লাগা। এরপর শুরু হয় তাকে নিয়ে ভাবনা। তারপর ঘোরাঘুরি। অথচ রাসূল সা: ভালোবাসা শুরু হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ঘোষণা করে বলেছেনঃ “কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়”। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম )
আর সমস্ত প্রকার যিনা হারাম ঃ আল্লাহ তাআ’লা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেনঃ

“তোমরা যিনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ”। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩২)
বেগানা নারীকে স্পর্শ করা কতো বড়ো পাপ! এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন “নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়।” ( তাবারানী, ছহীহুল জামে হাদীস -৪৯২১)

কথিত প্রেমিক আর প্রেমিকাদের একে অন্যের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। পরকালে ভালোবাসা নামক শয়তানী ধোঁকা থাকবে না। থাকবে শুধুই আগুন। আল্লাহর কসম! তখন এই প্রেমিক প্রেমিকারা একজন আরেকজনের চরম শত্রু হয়ে যাবে। আর দুনিয়ার জীবনে একজন আরেকজনকে জেনা ব্যভিচারে বন্ধু হিসাবে নেওয়ার জন্য হাত কামড়িয়ে আফসোস করবে। নিজের আঙ্গুল কাটবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে না নিতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে পথভ্রষ্ট করেছিল”। সুরা আল-ফুরকান, আয়াত ২৭-২৯।

তাই একজন মুসলমানের উচিত এই ধ্বংসের পথ থেকে সরে আসা। এ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। যদি এ-ক্ষেত্রে ঢিল দেয়, প্রেমের নদীতে তরী ভাসায় – যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম তাকে বার বার দেখে দেখে, যা শোনা হারাম তা বার বার শোনে , বিপরীত লিঙ্গের সাথে কথা বলাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে করে, আর এভাবেই ডুবে যায় প্রেম-ভালোবাসায়, তাহলে সে নিশ্চয় গুনাগার, পাপী, শাস্তির উপযোগী।
যদি কোন ব্যক্তি প্রেমাক্রান্ত হয়ে পরে। অতঃপর সে পবিত্রতা অবলম্বন করে, ধৈর্য ধরে, তাহলে আল্লাহ তার তাকওয়ার জন্য ছাওয়াব দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে ও সবর করে, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।’

মহান আল্লাহ আমাদের অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার মোহ থেকে মুক্ত রাখুক। আর বৈধ ভালোবাসা যেমন, মা-বাবা, আত্মিয়-স্বজন, অসহায় মানুষের জন্য ভালোবাসার তাওফিক দেন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর