একমাস পরও নিজ ভিটায় ফিরতে পারেনি লংগদুর ক্ষতিগ্রস্তরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাঙামাটির লংগদুর তিনটিলা, মানিকজোর ছড়া এবং বাট্টা পাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার এক মাস পূর্ণ হয় রোববার। কিন্তু এখনও তারা রয়েছেন বিদ্যালয়, পরিত্যাক্ত ঘর ও বিহারে। ঘটনার একমাস পার হলেও মেলেনি পুনর্বাসনের খবর। ফলে তারা আশ্রয়স্থল ছেড়ে নিজ ভিটায় ফিরতে চাইলেও পরিবেশ না থাকায় ফিরতে পারছেন না। পুনর্বাসনের জন্য তারা সরকারের দিকে চেয়ে আছেন।

এদিকে বন্ধ শেষে রোববার বিদ্যালয় খুললেও ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নেয়ার কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান করা সম্ভব হয়নি। আশ্রয় নেয়া ক্ষতিগ্রস্তরা ছেলেমেয়েদের স্বার্থে বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়ার কথা চিন্তা করলেও বিকল্প কোন আশ্রয়স্থল না থাকায় তারা যেতে পারছেন না।রোববার দুপুরে মানিকজোর ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো বিদ্যালয় এবং দ্বিতল বিশিষ্ট নতুন ভবনে মানিকজোর ছড়া ও বাট্টা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে জায়গা না হওয়ায় বিদ্যালয়ের পাশে অনেকে ছোট ছোট টং ঘর বানিয়ে অবস্থান করছেন।

রবি কুমার চাকমা (৬০) বলেন, বৃষ্টি হলে থাকার জায়গার সংকট বেশি দেখা দেয়। বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়ের আশপাশ পুরো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে গাদাগাদি করে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। গত শুক্রবার একটি সংস্থা থেকে পাওয়া এক বান ঢেউটিন দিয়ে বিদ্যালয়ের আশপাশে অনেকে টং ঘর বানাচ্ছেন।

মানিকজোর ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমতি রঞ্জন চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ে ৭৯ জন শিক্ষার্থী আছে। বর্তমানে এ পরিস্থিতিতে পাঠদান করা সম্ভব নয়। আশ্রয় নেয়াদের বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া না হলে পাঠদান শুরু করা যাবে না। তাছাড়াও অধিকাংশ ছেলেমেয়ের বইপত্র পুড়ে গেছে। এখন সব মিলিয়ে আমরাও কি করব তা বুঝে উঠতে পারছি না। পাশের লংগদু নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। সেখানেও ক্ষতিগ্রস্থরা আশ্রয় নিয়েছে।

বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী করুণা চাকমা বলেন, ঘর পুড়ে যাওয়ায় তার বই পোশাক সবকিছু পুড়ে গেছে। বিদ্যালয় খুললেও বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বই খাতা নেই। ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী পিয়া চাকমা বলেন, গত এক মাস বই উল্টানো হয়নি। লিখাও হয়নি। আমাদের ঘর হলে পড়াশুনা হবে। না হলে হবে না।

টিনাটিলা পাড়া মনিশংকর চাকমা (৪০) বলেন, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত দিন পার করছেন বিদ্যালয় ও বিহারে। খুব কম সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অগ্নিসংযোগের পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এসে আমাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আশ্বাসের প্রতিফলন আমরা একমাসেও দেখলাম না। আমরা সরকারের কাছে পুনর্বাসন এবং ৫ বছর রেশনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের আর কিছুই নেই। আমরা সরকারের দিকে চেয়ে আছি।

আটারক ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা আর কতদিন বনে বাদারে থাকলে সরকার খুশি হবে জানি না। ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয়স্থল ছেড়ে ঘরের ভিটায় ফিরতে চায়। কিন্তু একমাসেও সেই পরিবেশ তৈরি করে দেয়া হয়নি। তারা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের দিকে চেয়ে আছে।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশাদ্দেক মেহেদি ইমাম বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য লিখেছি। কিন্তু আমরা এখনও কোন সাড়া পায়নি। আমরা চাচ্ছি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু বরাদ্দ না আসায় আমরা তা করতে পারছি না। ক্ষতিগ্রস্তরা এই বর্ষায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন।

উল্লেখ্য গত ১ জুন দিঘীনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া যায়। তিনি মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি গিয়েছিলেন। পরদিন ২ জুন সকালে লংগদুর বাট্ট্যাপাড়া থেকে লাশ নিয়ে লংগদু সদর পর্যন্ত শোক মিছিল বের করে বাঙালিরা। এই মিছিলটি নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা তিনটিলা পাড়ায় আসলে গুজব ছড়িয়ে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ শুরু করেন কিছু উচ্ছৃঙ্খল বাঙালি। এ ঘটনায় চার গ্রামের ২২৪টি ঘর পুড়ে যায়। লংগদু ইউপি চেয়ারম্যানের ঘরের ভেতরে আগুনে পুড়ে মারা যান গুণামালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর