নিঝুম দ্বীপ যেন একখণ্ড স্বর্গ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ভ্রমণ বিলাস নয়, আনন্দ। যে জীবনে কখনো ভ্রমণ করেনি, সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আমি হইনি। সময় সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। ঘুরে বেড়াই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এতে করে বন-বনানী, বন্যপ্রাণীর সঙ্গে যেমনি সাক্ষাৎ ঘটে তেমনি আবার নতুন জনপদের বৃত্তান্ত জানার সুযোগ হয়। ফলে বেশ উপভোগ করি।
ঈদের ছুটিতে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার পরিকল্পনা করে আসছি আগে থেকেই। একজন সহকর্মী কথা দিয়েছেন সফরসঙ্গী হবেন। সব ঠিকঠাক, হঠাৎ করে তিনি মত পাল্টিয়েছেন নিঝুম দ্বীপ নয়, অন্যত্র যাবেন। কি আর করা! যেতে হবে একাই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঈদের রাতেই রওনা করলাম। প্রায় ১৪ ঘণ্টা লঞ্চে কাটিয়ে অবশেষে পৌঁছলাম হাতিয়া উপজেলায়। এ উপজেলাটি নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত। হাতিয়া থেকে তিন-চার ঘণ্টার পথ নিঝুম দ্বীপ (ঢাকা থেকে মোট ১৮ ঘণ্টার জার্নি)। যেতে হয় মোটরসাইকেল অথবা লক্কড়-ঝক্কড় টাইপের গাড়িতে চড়ে। হাতিয়া থেকে জাহাজমারা পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালো, তারপর থেকে ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে, বলে শেষ করার মতো নয়। রাস্তাটি গিয়ে ঠেকেছে নিঝুম দ্বীপ ট্রলার ঘাটে। সেখান থেকে ওপারেই নিঝুম দ্বীপ।
এ অচিন পথটি অতিক্রম করতে আমাকে সাহায্য করেছেন সোনাদিয়া ইউনিয়নের নূর নবী এবং তার বোন জামাই আফছার ভাই। বেশ আন্তরিক লোক দু’জন। নূর নবীর বাবা হাজী রুহুল আমিন কোম্পানি সন্ত্রাসী কর্তৃক মারাত্মক আহতের পর শয্যাশায়ী হওয়া সত্ত্বেও বাবাকে রেখে বেচারি আমাকে সময় দিয়েছেন। ধন্যবাদ দু’জনকেই।
দ্বীপে পা রাখতেই আমি অভিভূত হলাম, যেন এক টুকরো স্বর্গ দেখছি। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দ্বীপটি প্রায় ৬৭ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রসৈকতে যেতেই আরো অভিভূত হলাম, এমন নৈসর্গিক স্থানে এত দেরিতে কেন; নিজকে প্রশ্ন করলাম সৈকতে দাঁড়িয়েই। হ্যাঁ পাঠক, দ্বীপের দু’দিকে চক্রাকারে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান, যেখানে রয়েছে মেঘনার মোহনাও। সেটি দেখার মতো বটে।
অবাক করা তথ্যটি হচ্ছে এ দ্বীপটি হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সুন্দরবনের পরেই আয়তনে নিঝুম দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপটির আয়তন ৯১ বর্গ কিলোমিটার। বল্লার চর, কামলার চর, চর মুরি এবং চর ওসমান এই চার চরের সমন্বয়ে নিঝুম দ্বীপ গঠিত। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দ্বীপে লোক বসতি ছিল না। ছিল না কোনো ধরনের কোলাহলও। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম কালাম পর্যবেক্ষণে গেলে সুনসান নীরবতার কারণে তিনি ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামকরণ করেন। অবশ্য বাংলাদেশ বন বিভাগ ৭০ দশকে কার্যক্রম শুরু করে, শুধু মাত্র চার জোড়া হরিণ অবমুক্তের মধ্য দিয়ে। যার সংখ্যা ১৯৯৬ সালে ছিল ২২ হাজার। বর্তমানে অর্ধ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করছেন বনবিভাগের লোকজন। বুনো হরিণদের সঙ্গে মিতালি করার সুযোগও রয়েছে এখানে, যদি আপনি প্রকৃতিপ্রেমী হোন। অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে ওরা আপনার কাছেও ভিড়বে না।
হরিণ ছাড়াও এখানে রয়েছে ৩৫ প্রজাতির পাখ-পাখালি, ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ-গাছালি। তার মধ্যে কেওড়া গাছেরই আধিক্য। আর দ্বীপের বিশেষ আর্কষণ উভচর প্রজাতির মাছ। মাছটির নাম ‘মারসৃপার’, এরা জলে কিংবা স্থলে সমানভাবে বিচরণ করতে পারে। দেখতে কিছুটা বেলে মাছের মতো। খেতে কেমন; স্বাদ নেয়ার সুযোগ হয়নি। আশা করি আপনারা সেই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর