ভরা মৌসুমে চালের দাম ডবল হলো কেন

হাওর বার্ত  ডেস্কঃ ব্যাপক দরবৃদ্ধির মধ্যে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে সরকারের বক্তব্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন জাতীয় পর্টির সংসদ সদস্য, একাধারে সরকারের শরিক ও বিরোধী দলটির নীলফামারীর নেতা শওকত চৌধুরী। রবিবার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “ভরা মৌসুমে চালের দাম ডবল হলো কেন? এটা সমস্যা, দেখা দরকার। কী রকম মজুদ আছে? মজুদই যদি থাকে তবে চালের দাম ডাবল হবে কেন ? আমার মনে হয় মজুদ নাই, এগুলো ফাঁকা বুলি।”
গত এক বছরে দেশে চালের দাম বেশ কয়েক দফায় বেড়েছে। সরকারি পর্যবেক্ষণেই এক বছরে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩২ শতাংশ বাড়তে দেখা যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মে মাসে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়, যা এক বছর আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। মাঝারি আকারের চালের দাম আগের বছরের থেকে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। সরু চালের দাম এক বছরে বেড়েছে সাত শতাংশ।
ক্ষমতায় থেকে জনগণকে নিয়ে হেলাফেলা না করতে আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা খুব পিচ্ছিল জিনিস, এটাকে লক্ষ্য রাখবেন। এটা নিয়ে খেলা করবে না, মিথ্যা কথা বলবেন না।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাজধানীর প্রতি ১০ জনের ৯ জনই সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে বলে দাবি করেন শওকত চৌধুরী। বলে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজধানীর ১৮টি আসনের
মধ্যে একটিও পাবে না ক্ষমতাসীন দল।
দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে চালের দাম বাড়ায় কঠোর সমালোচনা করেন শওকত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আগে বলতাম, চাউলের দাম বেশি, নতুন ধান উঠলে কমে যাবে। এখন নতুন ধান উঠার পরেই চাউলের দাম ডাবল হয়ে গেছে। এটা কেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) বলছেন মজুদ আছে, মজুদ আছে, আমার মনে হয় মজুদ টজুদ কিছুই নাই।’
শওকত চৌধুরী বলেন, ‘জিনিসের দাম বাড়েনি, এটা ফাঁকা বুলি। এ ফাঁকা বুলি দিয়ে পরে বিপদে পড়তে হবে। এইটা ঠিক ঠাক করার দরকার। কোন জিনিসে দাম বাড়েনি এটা বলেন?’।
শওকত চৌধুরী বলেন, ‘চাউলের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামগুলো লক্ষ্য করবেন। সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা ও সরকার এগুলো দেখুন। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে হবে। আমরা ঢাকা শহর ঘুরে দেখেছি ঢাকা শহরের ৯০ শতাংশ লোক আমাদের বিরোধিতা করে। এটা কেউ পর্যালোচনা করে না।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ৯০ শতাংশ লোক আমাদের বিপক্ষে, কিন্তু তারা মুখ দিয়ে বলে না। সরকারের বিপক্ষে চলে গেছে ৯০ শতাংশ লোক ঢাকায় ১৮ টা সিট একটা সিট পাবে কি না সন্দেহ আছে। আমি কিন্তু যা বলছি সত্য কথা বলছি, আপনারা যা মনে করেন না কেন।’
শওকত চৌধুরী বলেন, ‘চাউল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর চেষ্টা করেন দয়া করে। ফাঁকা বুলি মাইরেন না, বহু ফাঁকা বুলি মেরেছেন।’
বাজেট বরাদ্দে সুষম বণ্টন হয়নি অভিযোগ করে নীলফামারী-৪ আসনের এই সদস্য বলেন, “রংপুর বিভাগে মেগাপ্রজেক্ট নাই। সুষম বণ্টন চাই। চার লাখ কোটি টাকার বাজেট। আমার ভাগেতো ১০০ কোটি টাকা পড়ে। অন্তত ৫০ কোটি টাকাতো পড়ে।”
নিজের এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জনগণ মনে করে, মন্ত্রী আমাদের টাকা দিছে, আমরা মারি খাই। উনারা বলে দেবে, কিন্তু দেয় না।
“আমাদের বেইজ্জত করার অধিকার কি তাদের আছে? আমরা জুতা খাব, আর উনারা ফুলের মালা পরবে। চুরি বন্ধ করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে নিজ দলের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যত বৈষম্য করুক আমরা ঝগড়া করব না। ক্ষমতা বড় পিচ্ছিল জিনিস। পিছলাইতে সময় লাগে না।
“আমরা দেখায়া দেব, এই আপনাদের সমস্যা। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে হবে। আমাদের সাথে রাখবেন। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে বেইমানি করে নাই।”

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর