বন্যার কথা বলে বাঁধ দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টা চলছে

অসময়ে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান সংক্রান্ত সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, অকালে পানি বেশি হওয়া, এসব কথা বলে হাওর দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বার বারই। অথচ. সুনামগঞ্জে এবার হাওরডুবি শুরু হয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল হাওর তলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর ধর্মপাশার গুরমার হাওর, জগন্নাথপুরের বৃহৎ নলুয়ার হাওর ডুবেছে ২৯ মার্চ। এসময় নদীর পানির উচ্চতা ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপ অনুযায়ী ২.৪২ মিটার। কিন্তু পাউবো’র বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬.৫ মিটার। তাহলে বেশি পানি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে মূলত পাউবো, ঠিকাদার এবং পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) যে দুর্নীতি করেছে, সেটি ঢাকা’র চেষ্টা করা হচ্ছে। ঠিকাদার ও পিআইসি সময়মত অনেক বাঁধের কাজই শুরু করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকার দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে বাঁধ না হওয়া অংশ দিয়ে বা অসময়ে নির্মিত বাঁধ ভেঙে একে একে সকল হাওর তলিয়ে গেছে।’
গণমাধ্যমকর্মীরা আরো বলেন,‘হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারী প্রথা বাতিল করতে হবে। হাওরপাড়ের স্থানীয় কৃষক, স্কুল শিক্ষকদের অন্তর্ভূক্ত করে পিআইসি গঠন করতে হবে। বাঁধ নির্মাণ কাজে স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। হাওরের বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এলজিইডি, সওজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নদী খনন করতে হবে, কম সময়ে হয় এমন ধানের বীজের উদ্ভাবন করতে হবে, সর্বোপরি হাওরের ফসল রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
গণমাধ্যমকর্মীরা তদন্ত কমিটিকে বলেন,‘সরকারের দায়িত্বশীলরা বলেন হাওরে বেশি টাকা লুটপাট হয়নি। অথচ ৫ হাজার কোটি টাকার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি তারা উচ্চারণ করেন না। এসব মন্তব্য করে লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে উপহাস করা হয়। বাঁধ দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে এর সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ পাউবোর কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং পিআইসির শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ’
জেলা প্রশাসনের করা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি’র আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সফিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি, বিজন সেন রায়, পঙ্কজ দে, লতিফুর রহমান রাজু, বিন্দু তালুকদার, এমরানুল হক চৌধুরী, সেলিম আহমদ, হিমাদ্রী শেখর ভদ্র মিটু, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, আমিনুল হক, শাহাব উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
তদন্ত কমিটি’র আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন,‘ হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের জবাবহিদিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছি। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজে বের করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সাথে কথা বলছি। আমরা চেষ্টা করব ফসলহানির বিষয়ে কারণ খোঁজে বের করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে।’
মতবিনিময় সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য এলজিইডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মিয়া, জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর