হতভাগা সেই মায়ের আশ্রয় গোয়ালঘর

এক সময় যে মায়ের কাছে পুত্ররা অবলম্বন থাকে, সময়ের পরিবর্তনে পুত্রদেরকে ভূমিকা বদল করতে হয়। মায়ের সাহচর্য যে কতটা মূল্যবান, এটা যে পুত্র অনুভব করতে পারেনি সে অতি হতভাগ্য। পুত্রদের ভবিষ্যৎ-চিন্তায় মা প্রাণপাত করেন নিজেদের শখ-শৌখিনতা বিসর্জন দেন। পুত্র-কন্যাকে তার ভবিষ্যতের ‘বিনিয়োগ’ না ভেবেই।

পরিবার বলতে কি শুধুই নিজের স্ত্রী আর সন্তান? মা অপাংক্তেয় সেখানে? মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন যদি বোঝা হয়, তবে স্ত্রীর প্রতি, নিজ ছেলে-মেয়ের প্রতি ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতে হয় সামাজিক জীব হিসেবে, তা-ও তো বোঝাসদৃশ!

নিঃসঙ্গ বা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণাময় জীবনের সমাধান হয়েছে এক মায়ের গোয়ালঘরে। সেই মা একবেলা খাদ্য সংস্থান প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা পাচ্ছেন না পুত্রদের অবজ্ঞা-অবহেলায়।

গোয়ালঘরে শেয়ালের কামড়ে আহত, জরাগ্রস্ত, কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ে রয়েছেন সেই মা।

পৃথিবীর সব নিষ্ঠুরতাকে হার মানানো এ ঘটনাটি ঘটেছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের তেজপাটুলি গ্রামে।

ওই গ্রামের মুখলেছুর রহমান, মোবারক হোসেন এবং মারফত মিয়া তাদের বৃদ্ধা মা বিধবা মরিয়ম নেছাকে একটি ভাঙা গোয়ালঘরে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখেছেন।

শনিবার রাতে ওই গোয়ালঘরে হানা দেয় বেশকিছু শেয়াল। শেয়ালের পাল মরিয়ম নেছাকে কামড়ে দেয়, খেয়ে ফেলে পায়ের অনেক মাংস। সন্তানদের অবহেলায় ওই গোয়ালঘরেই এখন বিনা চিকিৎসায় কাতড়াচ্ছেন বৃদ্ধা মরিয়ম।

স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আর্তনাদ করে তিনি বলছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে বড় ছেলেকে মেট্রিক পাস করিয়েছি। বড় ও মেঝো ছেলে বিয়ে করার পর আমাকে রেখে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এখন ছোট ছেলের গোয়ালঘরেই একটু মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি করে অর্ধাহারে-অনাহারে কোন মতে কালাতিপাত করছিলাম। এখন যন্ত্রণা আর ব্যথায় তাও করা সম্ভব হচ্ছে না ।

এত কিছুর পরও সন্তানদের প্রতি নেই তার কোন অভিযোগ। স্থানীয়রা এই বৃদ্ধার চিকিৎসা ও বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর