আফসারুলের আসনে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে বাহার

জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক এম এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার চট্টগ্রাম সংসদীয় আসন ১০ থেকে মনোনোয়ন চান। কাজে লাগাতে চান বাবার ভোট ব্যাংককে। চট্টগ্রাম সংসদীয় ১০ আসনে বর্তমান সাংসদ আফসারুল আমিনের ঘাঁটিতে নিজের জায়গা করে এ আসনের জনগণের সুখ-দুঃখের দাবিদারও হতে চান তিনি। করতে চান এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ।

আফসারুল আমিনের উপর দলের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে মনোনোয়নের ব্যাপারে আশাবাদী সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার।অন্যদিকে বিএনপি সমর্থনপুষ্ট সাবেক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র মনজুরও আওয়ামী লীগে পুনরায় ফিরে মনোনোয়ন চাইতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮৭ নং আসন। এ আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ০৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফসারুল আমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল লতিফ ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯১ (শতকরা ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ) ভোট, বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৬ ভোট (৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ), অনান্য ৮ প্রার্থী ১২ হাজার ২২৩ ভোট (শতকরা ০৩ দশমিক ৮ শতাংশ) ভোট পান।

এদিকে মনোনোয়নের ব্যাপারে আশাবাদের কথা ব্যক্ত করে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার জানান, ১৪ বছর ধরে তিনি আওয়ামী রাজনীতি করছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তিনি। তার বাবা এম এ আজিজ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। আর তার পরিবার রাজনীতিসমৃদ্ধ পরিবার। তাই তার রাজনীতিতে আসা। গতবার মনোনোয়ন চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি করতে লক্ষ্য থাকতে হয়। বিকশিত হওয়ার একটা সুযোগ থাকে। জনগণের সেবা করার সুযোগ থাকে।আর জনগণের সেবা করতে গেলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আর তা হয় মনোনোয়নের মাধ্যমে। তার বাবা নৌকার হাল ধরেছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। আর এ ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে তার ছিলো সম্পৃক্ততা।

এম এ আজিজ ১৯২১ সালে চট্টগ্রাম জেলার হালিশহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাব্বত আলী ও মাতা রহিমা খাতুন। এম এ আজিজ ১৯৪০ সালে পাহাড়তলী রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।এ সময়ে তিনি অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লীগে যোগ দেন।রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯৪৪ সালে তাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন।আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ভাষা আন্দোলনের পরপরই তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।

এম এ আজিজ ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে ৯২-ক ধারা জারি হলে সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬-দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৬ সালের ৮ মে নিরাপত্তা আইনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গ্রেফতার হন।

সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৭০ সালের ১৮ জুলাই তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন।এম.এ আজিজ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কোতোয়ালি-ডবলমুরিং আসন থেকে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এম.এ আজিজ ১৯৭১ সালের ১১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তার নামানুসারে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম।

এদিকে আফসারুর আমিনের সমালোচনার করে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বলেন, সাংসদরা এলাকায় গিয়ে কাজ করেন। কিন্তু আফসারুল আমিন সাধারণ কর্মীদের থেকে দূরে চলে গেছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর থেকে কোনো কার্যক্রমে হাজির হননি তিনি। দলীয় নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে গেছেন। আফসারুল আমিন এলাকায় একটা গ্রুপ সৃষ্টি করে গেছেন। মন্ত্রী থাকাকালে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রকল্প তার হাতে ছিল না।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক এমপির একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এ আসনের ৭টি ওয়ার্ডের কমিটির মধ্যে আফসারুল আমিনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।মূলধারার রাজনীতির বাইরে অবস্থান করছেন তিনি। তিনি এখন আর কোনোভাবেই মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

তবে বাহার আরও বলেন, কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি করিনি।করব না। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ বহুদলে বিভক্ত। কিন্তু কোনো দলে যাইনি। মনোনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে না গিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব মোতাবেক নিজের এলাকার বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় বের করার কাজে নিয়োজিত করব। জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নয়নে সচেষ্ট থাকব। যা যুক্তিসঙ্গত, তা পার্লামেন্টে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রীয় উদ্যেগে বিশেষ বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে উন্নয়নে সচেষ্ট থাকব।

চলতি বছরের পাঁচই জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নিষ্ক্রীয় নেতাদের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন ও খোরশেদ আলম সুজন।

নগর কমিটির কয়েকজন সহ-সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং নির্বাহী কমিটির বেশকিছু সদস্য এই সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন। আগের দিন একই স্থানে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের চেয়েও এদিন জমায়েত ছিলো কম।

সমাবেশে দলীয় সাংসদদের অনুপস্থিতির সমালোচনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন নগর কমিটি ও তৃণমূলে পদধারীদের নিষ্ক্রীয়তায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

পদ নিয়েও নিষ্ক্রীয় থাকা নেতারা নিজ উদ্যোগে দায়িত্ব না ছাড়লে দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের বাদ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন চট্টগ্রামের মেয়র নাছির।

অনুষ্ঠানে সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এম এ লতিফ নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাংসদ আফসারুল আমিন।

ওই অনুষ্ঠানে ২০১৪ সালের নভেম্বরে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া নাছির দলকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। যারা পদ নিয়ে দায়িত্ব পালন করেননি, তাদের চিহ্নিত করে পদ থেকে বাদ দিয়ে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের মূল্যায়নের কথা বলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬০ জন নেতা আছেন। এই ৬০ জন অবশ্যই তার অন্যান্য নেতাকর্মী নিয়ে আসবেন। একা আসলে হবে না।আমি আসলাম, মিটিং এর সামনে বসে বসে পা নাড়ালাম, তা হবে না। বহুত সহ্য করছি।

গত বছরের ১০ এপ্রিল সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিনের বহিষ্কারের দাবিতে মীরেরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আধাঘণ্টা অবরোধ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীরা।

দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টা পর্যন্ত অবরোধকালে মহাসড়কের উভয় দিকে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়।

অবরোধের সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা আফসারুল আমিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এসময় তারা শ্লোগান দেয়, ‘এক দফা, এক দাবি, নব্য রাজাকার আফসারুল আমিনকে বহিষ্কার করুন, করতে হবে।’ বেয়াদব আফসারুলের শাস্তি চাই, দিতে হবে।’ একপর্যায়ে ছাত্রলীগের অবরোধে যোগ দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগের দিন ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আয়োজিত ‘টেকসই জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার একপর্যায়ে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমিন।

অনুষ্ঠানে উত্তেজিত আফসারুল আমিন বার বার চেয়ার ছেড়ে উঠে গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে মারতে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম মেয়র আ জ ম নাছিরসহ অন্যরা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তবে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন নীরব ছিলেন। এ ঘটনায় অনুষ্ঠানে দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যেও হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কির পর অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্পের কার্যকারিতার পক্ষে-বিপক্ষে মত দেওয়া নিয়ে সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমিনের তোপের মুখে পড়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

দলে নিজের অবস্থান ও আগামী নির্বাচনে মনোনোয়ন প্রত্যাশী কিনা জানতে চাইলে আফসারুল আমিন বলেন, আমি সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।আগামী নির্বাচনেও দল ধেকে মনোনোয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি দলে কতটুকু সরব না নিরব তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। চাটুকারদের কথায় আমার কিছু হবে না বলেও জানান এমপি আফসারুল আমিন।

তবে আওয়ামী রাজনীতিতে ফিরে মনোনোয়ন চাওয়া নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির সমর্থনপুষ্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, নির্বাচন আসতে এখনো ও অনেক দেরী।আর এসব বিষয়ে এখনোও কিছু ভাবেননি বলে জানান মনজুর আলম।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর