‘ডিজিটাল’ আওয়ামী লীগের সামনে ‘অ্যানালগ’ বিএনপি

বিশিষ্টজনরা বলেছেন, সময় মত বিএনপি তাদের কার্যক্রম নিয়ে সামনে আসবে। আবার কেউ বলছেন, বিএনপির এখনও ‘নিদ্রা’ ভাঙেনি।

সম্পতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যক্রমে সারাদেশের নেতাকর্মীদের একযোগে সম্পৃক্ত করতে তৃণমূলে দলের কার্যালয়ে ল্যাপটপ ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যাতে দলীয় কোনো কর্মসূচি, ই-মেইলের মাধ্যমে দূত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারে। ফলে তথ্য আদান-প্রদানে মোবাইল ফোন কিংবা কুরিয়ার যোগে চিঠির অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। অপরদিকে প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন তৃণমূলকে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কের মধ্যে আনতে পারেনি। কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিগুলো বিএনপির নিজস্ব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে কর্মীদের একটা নেটওয়ার্কের মধ্যে আনার চেষ্টার কথা বললেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে দলটির নেতাকর্মীরাও তা স্বীকার করছেন।

দেশের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় একটি করে ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।গত ২০ মে দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে এসব ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। ল্যাপটপ বিতরণকালে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো ঘরে ফেলে রাখার জন্য নয়, দলের সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে।’

নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল তৎপরতা সম্পর্কে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধূরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবরকম সুবিধাই ব্যবহার করছে; এটা ভালো। তারা সংবাদপত্র ব্যবহার করছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল যত মাধ্যম তার ব্যবহার করছে। যতরকম আধুনিক মাধ্যম আছে তা ব্যবহারে অনেক বেশি তৎপর। বিএনপির এখনও নিদ্রা ভাঙেনি।’

আওয়ামী লীগ চাইছে আরেকবার ক্ষমতায় যেতে। এটা খারাপ কিছু না উল্লেখ করি তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা হচ্ছে বিএনপির ঘুম ভাঙতেছে না। তাদের নিদ্রার ভঙ্গ হচ্ছে না। বিএনপির অবসাদে ভুগছে আমি বহুবার বলেছি। ব্যাপক জনগণ সরকার পরিবর্তনের পক্ষে তারা এ সরকারের এত দূর্নীতি মেগাপ্রজেক্টের নামে প্রতারণা, ধর্মকে ব্যবহার করা। এমন কি বিএনপির ভুলগুলোও এ সরকার কাজে লাগাচ্ছে।

বিএনপির ডিজিটালাইজেশনের ব্যবহার সম্পর্কে বিএনপিপন্থী আরেক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘হবে, এটা সময়ের ব্যাপারে। একসাথে করতে হবে, এমনটা নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখনই সক্রিয় নয় এমনটা নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছে এটাও ওই লক্ষ্যেই করছে। এটা কোনো সমস্যা নয়, একভাবে না একভাবে হচ্ছে তো।’

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে নির্বাচনের আগেই দলীয় প্রচারণাকে আরোও সক্রিয় এবং দলের বিভিন্ন কার্যক্রম সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে এবং তাদের মতামত যাচাইয়ের জন্য ওয়েসাইট (www.albd.org) ইউটিউব চ্যানেল (http:/www.youtube.com/myalbd) এবং ফেসবুকের (www. facebook.com/awamileage.1949) পেইজ চালু করে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খবর, ছবি, ভিডিওচিত্র সহ সংগঠনের তরফ থেকে পূর্ণাঙ্গ অবয়বে প্রচার করা হয়। কিন্তু বিএনপি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আসে গত বছর থেকে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষীকীতে (১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ ইন্টারনেটে ছয়টি মিডিয়া আউটলেট চালু করে। টুইটারে অ্যাকউন্ট খোলার মধ্যরদিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য্মে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সমন্বয় করেন সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ।

ওই অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নামে একটি আলাদা ওয়েবসাইট (www.bnpbangladesh.com), ফেইসবুক (bnp.communication), টুইটার (bnpbangladesh) ও ব্লগও (www.bangladeshivoices.blogspot.com) উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপি সামাজিক মাধ্যমে খুবই সক্রিয়। আমাদের চেয়ারপারনের নিজস্ব টুইটার, বিএনপির ফেসবুক পেইজ আছে। বিএনপি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আছে। আমাদের প্রত্যেক দিনের কর্মসূচিগুলো ওয়েবসাইটে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে, গত কয়েকবছরে সাধারণ জনগণের কাছেই ফেসবুক, ইন্টারনেট আছে। যে কোনোভাবে জেলা-উপজেলা লেভেলে কানেক্টটেট। আমাদের এটা আরো বাড়াতে হবে। কারণ এটা তথ্য প্রযুক্তির যুগ। বিএনপি কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই, আমরা এগিয়ে যা।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই তারা তৃণমূলে ল্যাপটপ পৌঁছে দিতে পড়েছে উল্লেখ করে বিএনপির অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায়ই বাইরে ১০ বছর আছি। চাইলে সব কিছু কারা যায় না। সামাজিক মাধ্যমে আমরা অ্যাকটিভ আছি, আমরা পজেটিভ প্রচারণার মাধ্যমে এগুতে চাই। নেগেটিভ প্রচারণা দিয়ে এগুতে চাই না।’

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গড়ে তুলতে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মাইক্রোব্লগ টুইটার, বিভিন্ন ব্লগ এমনকি স্কাইপ ও ভিডিও শেয়ারিং সাইট ভিমপোতে নিয়মিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এসব মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে দলের স্বপক্ষে তথ্য ও যুক্তি।

এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার-প্রকাশনা সেল, তথ্য ও গবেষণা সেল, সেন্টার ফর রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (সিআরআই) গঠনের পাশাপাশি অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থক গোষ্ঠীও অনলাইনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আধুনিকায়নের সকল সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে দলের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিলাম। তারা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যেন সবাইকে অবহিত করতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় এটা বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা সহজেই যাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য দ্রুত আদান-প্রদান করতে পারে, একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলতে জেলার সাংগঠনিক কাজে ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। এখন দলীয় কার্যক্রম দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবো।’

তবে বসে নেই বিএনপিও। বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি আইটি সেক্টরে ৩০০ তরুণ কাজ করছে বলে জানা গেছে। দলের এক নেতা পরিবর্তনকে জানান, বিএনপি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো হচ্ছে। আমাদের গবেষণা, আইসিটি সেল আছে। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। দেশের বাইরে বসে কাজ করছে ৩০০ লোক। একসঙ্গে তো সবাই কাজ করতে পারবে না। কারণ দৃশ্যমান কিছু যদি করা হয় তাহলে নানা অজুহাতে সরকার তা বন্ধ করে দেবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনালে টেলিকমিনেকেশন ইউনিয়নের এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের আইসিটি সেক্টরে ১৭৫ টি দেশে মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫ তম। যা মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের নিচে। আওয়ামী লীগ যে এগিয়ে গেছে এটা বলা যাবে না। তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে বলতে চায়; যে বিশ্ব জয় করেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান তো বলেন না। আমরা ভিশন ২০৩০ এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া এ ভিশন বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই আমরাও চেষ্টা করছি আগে থেকেই নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা করছি। বিএনপি পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগুচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর