আওয়ামী লীগের নতুন ধর্মভিত্তিক সংগঠন তৈরি নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ওলামা লীগের কার্যক্রম বন্ধ করে নতুন একটি ধর্মভিত্তিক সমর্থক সংগঠন করার প্রস্তাব নিয়ে দলটিতে পক্ষে-বিপক্ষে দু’টি মত দাঁড়িয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, একাধিক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী ওলামা লীগ নামের সংগঠনটির কট্টরপন্থী অনেক কর্মকান্ড আওয়ামী লীগকেই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

সেকারণে এর কার্যক্রম বন্ধে আওয়ামী লীগে ঐক্যমত্য হয়েছে। কিন্তু একই ধরণের আরেকটি সংগঠন করার প্রশ্নে দলটির নেতাদের অনেকে বলেছেন, সব মতের মানুষকে তারা সাথে রাখতে চান। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবস্থান থেকে এ ধরণের সংগঠন তৈরি করা সঠিক হবে না। ওলামা লীগ নিজেদের আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে দাবি করলেও বিভিন্ন সময় তাদের কর্মকান্ড প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের মতো ওলামা লীগও পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী পাঠক্রম আছে বলে দাবি তুলেছিল। বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধেও সংগঠনটি অবস্থান নিয়েছিল।

ওলামা লীগের দু’টি অংশ একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে কট্টরপন্থী অবস্থান নেয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে এর সাথে তাদের দলের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছিলেন।

শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলটির সম্পাদক মন্ডলীর এক বৈঠকে ওলামা লীগের কর্মকাণ্ড বন্ধের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়।

আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলেছেন, গ্রুপিং এবং দলের আদর্শ ও শৃংখলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ওলামা লীগের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। এখন স্বাধীনতার পক্ষের ওলামাদের সংগঠিত করে নতুন একটি সংগঠন করার বিষয়ও সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি একই আদলে নতুন একটি সংগঠন দাঁড় করানোর এই প্রস্তাব এনেছেন। এনিয়ে সম্পাদকমন্ডলীতেই পক্ষে-বিপক্ষে মত আসে।

দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, “এটা একটা প্রস্তাব হিসেবে এসেছে। আর এ ধরণের বিভিন্ন শ্রেণি পেশা বা বিভিন্ন মতকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারটা অতীতেও ছিল। আওয়ামী লীগ করেন এমন অনেকে তো বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদে আছেন। তাতেতো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। সবটাই প্রস্তাবনার পর্যায়ে আছে। এটা বাঁকা চোখে দেখার কী আছে?”

তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, তাদের দলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দলীয় গঠনতন্ত্রে ধর্মভিত্তিক কোন সমর্থক বা সহযোগী সংগঠন করার কোন নিয়ম নেই।

১৯৯৬ সালে ওলামা লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি নিজেদের আওয়ামী লীগের সমর্থক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ কখনও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, “আওয়ামী লীগে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি সহযোগী সংগঠন আছে, যেগুলোর বিষয় গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে। এর বাইরে নাম ব্যবহার করে বা লীগ জুড়ে দিয়ে সংগঠন তৈরি করে, এমন সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। ওলামা লীগ এরকম একটি। আমাদের নেতা-কর্মী অনেকে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্ত হয়ে ওলামা লীগের অনুষ্ঠানে গেছেন। কিন্তু দল থেকে নিষেধ করার পর তাঁরা আর যাননি।”

কিন্তু ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিয়ে আরেকটি সংগঠন দাঁড় করানোর প্রস্তাবের ব্যাপারে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, “এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথাই এসেছে। কিন্তু সবশেষ কথা যেটা, সেটা হচ্ছে, ধর্মীয় ব্যানারে আওয়ামী লীগ কোন রাজনীতি করতে চায় না।”

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, ভোটের রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে অনেক ছাড় দিচ্ছে। বিশ্লেষক কামাল লোহানী মনে করেন, আওয়ামী লীগের এই ছাড় দেয়ার বিষয়গুলো তাদের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জায়গায় আঘাত করছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর