হাঁস পালন ও সবজি চাষে জীবনের সফলতা

নদীতে বাড়ী ঘর হারিয়ে মামা বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে মায়ের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর নিজের অধ্যাবসায়ে হাঁস পালন ও সবজি চাষে সফলতা এনেছে ভরতকাঠির মনির হোসেন (৩২)। নেছারাবাদের গুয়ারেখা ইউনিয়নের বরতকাঠি গ্রামে বাড়ীতে বাড়ীতে বাসার কাজ, গ্রামে ঘুরে শাড়ি কাপড় বিক্রি করে প্রায় বিশ বছর আগে মা ময়তুন্নেছা কষ্টার্জিত সামন্য কিছু পুঁজি তুলে দেন ছেলে মনির হোসেনের হাতে। সেই টাকায় সামন্য কিছু জমি কিনে কঠিন অধ্যাবসায় আর মায়ের অব্যাহত প্রচেষ্টায় সেখানে কৃষিকাজ আর উন্নত জাতের হাঁস পালনে পিতৃহারা মনির এলাকার এখন সফলতার মডেল। পড়াশুনার ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও শিশু বয়সেই বাবা শাহেদ আলীকে হারানোয় মাত্র নবম শ্রেনীতে পড়াশুনা করে লেখা পড়ার ইতি টানতে হয় তাকে। জীবিকার তাগিদে মানুষের ধারে ধারে এক সময় যে মনির শ্রম বিক্রি করে একশ থেকে দেড়শ টাকার বেশি উপর্যান করতে পারতো না। সে এখন নিজের প্রচেষ্টায় খামারের ডিম আর সবজি বিক্রি করে প্রতিদিন উপার্জন করছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। মনিরের সেই সামন্য কিছু জমি থেকে তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর মনে জমানো দৃঢ় সংকল্পতায় জমির পরিমান বেড়ে দাড়িয়েছে তিন একরে। মনিরের ভাগ্যর চাকা ঘুরানো খামারের হাঁসগুলোর তিন মাস বয়স পর্যন্ত সামন্য কিছু কৃত্রিম খাবার লাগে। ওই বয়সের পর হাঁসগুলো একটু বড় হয়ে উঠলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় পরিচিত কোন খোলা জমির কাছে হাওড়ে-বাওড়ে। মনির বলেছে বর্তমানে তার খামারে পালিত ৩২৫টি হাঁস উন্নতজাতের ক্যামেল হাঁস ২৪৫-২৫০টি ডিম দেয়। মাঠে ছেড়ে দেওয়ার পরে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে তারা খায় দায় জলে, ডিম দেয় ঘরে। এজন্য হাঁসের খাবার সংগ্রহের জন্য তার হয়না বাড়তি কোন টাকা পয়সার খরচও। মনির হোসেন জানান, তার বর্তমানে তিন একর জায়গার মধ্যে ১০ কাঠা জায়গায় তিনি ফলিয়েছেন শসা, ঢেড়স ও ডাটা শাক। প্রতিদিন সে সাড়ে সাতশ টাকা শত হিসাবে ডিম বিক্রি আর শষা ও ঢেড়স বিক্রি দ্বারা কয়েক সহ¯্রাধিক উপার্জন করছেন। এছাড়াও তার বদৌলতে জুটছে অভাবি দু‘তিনটি অসহায় পরিবারের কর্মসংস্থানও। মনির বলেছে অবশিষ্ট জমিতে হয়েছে ইরি ধানের চাষ। এবছর তিনি ওই জমি থেকে ৮০-৯০মন ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এভাবে শুধু মনিরই নন মনিরের এই দৃষ্টান্তে, ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটাতে পার্শ্ববর্তী দৈহারী, সারেংকাঠি ইউনিয়নের কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবকেরাও চেষ্টায় নেমেছেন নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগাতে। ওই যুবকেরাও মনিরেরমত খুলনার যশোর থেকে সংগ্রহকৃত শ্রীরামকাঠি থেকে উন্নত জাতের ক্যামেল হাঁস এনে পালন করা শুরু করেছেন। প্রথমে তিনমাস খানিকটা জল ও ডাঙার মধ্যে আবদ্ধ করে খাবার হিসাবে খুদ, কুড়ো ও কচুরিপানা দিয়ে হাঁসগুলো ছেড়ে দিচ্ছে মাঠের ঘাটের পরিচতকোন বিলে। তবে মনিরসহ ওই এলাকায় কৃষিকাজ করা উদ্যমি যুবকেরা বলেছেন, তারা হাঁসপালনে উপজেলার প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন পরামর্শই পাচ্ছেনা। সম্পূর্ন নিজের উদ্যোগে দূর-দূরান্তে গিয়ে পরামর্শ এনে এইসব কার্যক্রমে সফলতা বয়ে আনার চেষ্টা করছে।
নেছারাবাদ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা বলেন, প্রাকৃতিক খাবার ছাড়া হাঁস পালন করে সহসা লাভজনক হওয়া সম্ভব নয়। যেসব এলাকায় মাঠ,ঘাট, বিল রয়েছে সেসব এলাকায় হাঁস পালন করে মুরগীর ফার্মের চেয়ে সহসা লাভজনক হওয়া যায় বলে মত পোষণ করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একটি উন্নতজাতের ক্যামেল হাঁস বছরে ৩০০-৩৫০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক ভাল খাবার পেলে দু‘থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। উপজেলায় তাদের কাছে স্ব-উদ্যোগি মোট হাঁসের খামারের সংখ্যা কত জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা খামারের নির্ধারিত সংখ্যার কথা না বলতে পারলেও তিনি বলেন, উপজেলার আরামকাঠি, ভরতকাঠি ও সারেংকাঠিতে কয়েকটা হাঁসের খামার রয়েছে।
পিরোজপুর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল আলিম বলেন, জেলায় মোট ৩৫১টি হাঁসের খামার রয়েছে। যারমধ্যে নেছারাবাদে ১১১টি খামার আছে। উন্নতজাতের হাঁস পালন খুবই লাভনক। এদের রোগবালাই বলতে ডাকপ্লেগ একটি রোগ ছাড়া আর কিছুই হয়না। আর এ রোগের জন্য হাঁসের বাচ্চাকে তিন সপ্তাহ ও বাচ্চার ৪৫দিন বয়সে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখলেই কোন ভয় থাকেনা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর