জঙ্গি রেজওয়ানের খোঁজে গোয়েন্দারা মাঠে খুঁজে বের করতে কাজ করছি :আইজি

রাজধানীর লেকহেড স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে অভিযুক্ত রেজওয়ান হারুন লন্ডন থেকে চার দিন আগে ঢাকায় এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে তাকে খুঁজতে গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছেন। তবে তার গডফাদার দেশেই আছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, তাকে খুঁজে বের করতে কাজ করছি।

বিদেশে অবস্থান করে দেশে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী- এমন তথ্য অনেক আগে থেকেই গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। তবে সেই পরিকল্পনাকারীদের একজন রেজওয়ান হারুন বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, রেজওয়ান যে দেশে এসেছেন, তা সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে। তিনি দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। তা হলো- বিএইচ-০৬৩৪১৩৭ ও এই-৬০১৬৯৩৩ নম্বরের। দুটি পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে। রেজওয়ান হারুনের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা এরই মধ্যে জঙ্গি দলে জড়িয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষক ফারজাদ হক তুরাজ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

রেজওয়ানের ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষক তেহজিব করিম ও রাজীব করিম। রাজীব বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কারাগারে রয়েছেন। ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আরও রয়েছেন লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষক তাসনুভা হায়দার, ইয়াছিন তালুকদার, ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় অভিযুক্ত রেদওয়ানুল আজাদ রানা, লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষক মহিউদ্দিন শরীফ, ইফতেখার আহমেদ সনি, আরিফুর রহমান, লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ জেনিফার আহমেদ, মনিরুজ্জামান মাসুদ, তেহজীব করিমের স্ত্রী সিরাত করিম ও ড. রেজাউর রাজ্জাক।

সূত্র জানায়, ২০০০ সালে ধানমণ্ডিতে লেকহেড গ্রামার স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন জেনিফার আহমেদ। সে দেশে হিযবুত তাহরীরের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মাওলার স্ত্রী। জেনিফার নিজেও হিযবুতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেকহেড গ্রামার স্কুল তৈরির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জেনিফার আহমেদের বাবা লতিফ আহমেদ। ২০০৯ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরে দাঁড়ায় জেনিফার। বর্তমানে স্কুলটিতে তাদের কোনো মালিকানা নেই। পরে লেকহেড গ্রামার স্কুলের দায়িত্ব নেন প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদ। হারুন-অর-রশিদের ছেলে রেজওয়ান হারুন। তার বাবাও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন।

গোয়েন্দারা বলছেন, স্কুলটির মালিকানা পরিবর্তন হলেও জঙ্গিবাদের সঙ্গে যোগসূত্র বন্ধ হয়নি। রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামকে ওই স্কুলে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে আহমেদ ওয়াদুদ জুম্মান ওরফে সাইফুল নামে এক জঙ্গিকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে লেকহেড গ্রামার স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি আল কায়দার সাময়িকী ‘ইন্সপায়ার’-এর পঞ্চম খণ্ড বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।

এদিকে মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি রেজওয়ান হারুনের দেশে প্রবেশ বিষয়ে গোয়েন্দাদের ধারণা, প্রশাসনের কেউ না কেই তাকে দেশে ঢুকতে সহায়তা করেছে। বিমান বন্দরের কোনো না কোনো সংস্থার কর্মকর্তা জঙ্গিদের যাতায়াতে সহায়তা করছে। এমন সন্দেহের তালিকায় কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের আগস্টে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষকের জীবন-বৃত্তান্ত গোয়েন্দারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। এসব শিক্ষকদের সঙ্গে রেজওয়ান হারুনের যোগাযোগ রয়েছে। এই গ্রুপের প্রভাবশালী মাস্টার মাইন্ড তিনি।

এই ২৫ শিক্ষক ১০ বছর আগে থেকে এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদের বীজ বপনের কাজটি করেছেন। ইসলাম ও ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তিক বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করে ‘মগজ ধোলাই’-এর কাজ করা হয়েছে। শিক্ষার নামে এই ‘মগজ ধোলাই’-এর কাজটির মূল পরিকল্পনাকারী ড. রেজাউর রাজ্জাক। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ড. রেজাউর রাজ্জাক ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এমবিএ প্রোগ্রাম সমন্বয়ক।

জঙ্গিবাদের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এলে তিনি ওই ইউনিভার্সিটি থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। দেশে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলা ও টার্গেট কিলিংয়ের তিনি অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। বর্তমানে ড. রেজাউর রাজ্জাক মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা। এখন তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই রেজওয়ান হারুন দেশে ঢুকেছে কিনা সেটা নিয়েই ভাবছেন গোয়েন্দারা।

ইত্তেফাক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর