হাওরবাসীর দুর্দিন, ত্রাণ তৎপরতা কই

প্রকৃতির বৈরিতায় নিঃস্ব হাওরের লাখো মানুষ। পাহাড়ি ঢল আর উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ জেলার ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। নষ্ট হয়েছে কৃষকের প্রায় পেকে যাওয়া একমাত্র ফসল ধান। প্রকৃতির এই আচরণে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হাওরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। শুধু একমাত্র ধান নষ্ট হয়নি। বিষাক্ত পানিতে মারা পড়ছে টনের পর টন মাছ। মারা যাচ্ছে হাস মুরগীর মতো গৃহপালিত পশুও। ফলে হাওরের এইসব কৃষিজীবি মানুষদের চোখেমুখে এখন শুধু অন্ধকার। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষক তার দু:খ কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলছেন- ‘মনে কয় পানিতে ঝাঁপ দিয়া মইরা যাই, পোলাপাইন লইয়্যা এখন কেমন চলমু, কী খাওয়ামু’। এমন দুর্দশার কথা শুনে যে কারোরই মন খারাপ হওয়ার কথা। কৃষি নির্ভর এই দেশে, দুর্ভিক্ষের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা থেকে হয়তো বাঁচতে পারবোনা আমরাও। কারণ সব সময়ই দেখা যায় কারণে-অকারণে, সময়ে-অসময়ে বাড়ে দ্রব্যমুল্য। অন্যদিকে আমাদের নিত্য আহারের ধান বা চালের সবচেয়ে বড় যোগান আসে এই হাওরাঞ্চল থেকে। সেই হাওর অঞ্চলের সাড়ে তিন লাখ মানুষ মৌসুমের শেষ দিকে এসে প্রকৃতির আকস্মমিক বিপর্যয়ের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়েছে। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক। সঙ্গত কারণেই কিছু দিনের মধ্যে এই বিপর্যয় যে ১৬ কোটি মানুষকেও গ্রাস করতে পারে, সে আশঙ্কা অন্যায্য নয়। এরই মধ্যে আশা জাগানিয়া খবর হলো- হাওরবাসীর এই দুর্দিনে এগিয়ে গেছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, হাওর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এই সহযোগীতা আগামী মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। জাতীয় এ দুর্যোগে সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রসংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হল সরকারের এই ত্রাণ কতটা পর্যাপ্ত। যারা ঋণ করে ধান আবাদ করেছিলেন, তাদের কী হবে? তবে, সরকারের একার পক্ষেত এত বৃহৎ জনগোষ্ঠির সব চাহিদা মেটানো কখনোই সম্ভব নয়। সকলের অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাওরবাসীর দুর্দশা কিছুটা লাঘব করা সম্ভব। অতীতে শীত মৌসুমে বা বড় দূর্যোগের সময়ও আমরা দেখেছি, শহরের মানুষদের অনেকেই সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ হয়তো লোক দেখানো সহায়তা নিয়েও যায়। কিন্তু এবারের এই জাতীয় দূর্যোগে সেই চিত্র অনেকটাই কম। তাই সবার প্রতি আহ্বান হাওরবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এখনই আমাদের সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ। প্রয়োজনে শীতবস্ত্র সংগ্রহের মতো যৌথভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে, খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য সহযোগিতা দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। অন্যদিকে যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হাওরের কৃষকদের মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক বিক্রি করে, তাদের প্রতিও আহ্বান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পূর্বেকার ঋণ মওকুফ করে আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে বীজ সার বিতরণ করার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর