চিনির বাজার হঠাৎ অস্থির

রমজানকে পুুঁজি করে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী চক্র চিনির বাজার অস্থির করে তুলেছে। রোজার আগেই ক্রেতাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফায় নেমেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। নানান অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। হঠাৎ দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩৫০ টাকা। এতে পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৭ টাকা। গতকাল বিকেলে খুচরা বাজারে কিছু মুদি দোকানে কেজিতে তিন টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব দু-একদিনের মধ্যেই পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, রমজানকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করলে কেউ পার পাবে না। এ ক্ষেত্রে মিল মালিক বা আমদানিকারক যেই হোক বিনা কারণে রমজানে পণ্যমূল্য বাড়ালে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা আজ রোববার। এসব পণ্য-সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ী, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভার আহ্বান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বৈঠকে পণ্য উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ীরাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন
পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, চিনিকলের যন্ত্রপাতি ঠিক করার জন্য তিন দিন ধরে মিল বন্ধ রেখেছে মেঘনা গ্রুপ। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ বলেছে, তাদের মিলে অপরিশোধিত চিনি কম। এ জন্য পরিশোধিত চিনি বাজারে কম ছাড়ছে। মিল গেটে ট্রাক গেলেও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটছে রমজানের আগে। আগেভাগে মিল সার্ভিসিংয়ের কোনো পদক্ষেপ নেননি মিল মালিকরা। এ কারণে চিনির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, তাদের মিল থেকে চিনি সরবরাহ বিঘি্নত হয়নি। প্রতিদিন মিল থেকে দুই হাজার ৯০০ টন থেকে তিন হাজার টন চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে। মিল গেটে ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করা হয়। ডলারের দাম কমলে চিনির দাম মিল গেটে এই পর্যায়ে থাকবে। তিনি বলেন, তাদের মিলের চিনি সরবরাহে কোনো কমতি হবে না।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাসেম বলেন, বাজারে মিল থেকে তৈরি চিনি কেনাবেচা কম হচ্ছে। মিলগুলো সরবরাহ আদেশ (এসও) কেনাবেচা করছে। কয়েক দিন ধরে মিল থেকে তুলনামূলক কম চিনি সরবরাহ হচ্ছে। মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনির মিল তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ওই মিলের সংস্কার কাজ চলছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি চিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ যে পরিমাণে চিনি সরবরাহ করার কথা তা এখন দিচ্ছে না। এ কারণে চিনির দাম বেড়ে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মিল থেকে চিনি সরবরাহ সংকটের খবরে গতকাল সকাল থেকেই পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়তে শুরু করে। গত শুক্রবার প্রতি বস্তা চিনি দুই হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল সকালে তা বেড়ে তিন হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনির দামও বেড়ে যায়। দুপুরের পর থেকে প্রতি বস্তা চিনি কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে তিন হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, চিনির সরবরাহ সংকটের কারণে পাইকারিতে প্রতি কেজিতে ৭ টাকা বেড়েছে। একদিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩৫০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত শুক্রবার প্রতি কেজি চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। গতকাল সকালে পাইকারি দোকান থেকে বাড়তি দামে চিনি আনতে হয়েছে। এ কারণে কেজিতে তিন টাকা বাড়িয়ে ৬৮ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে আগের চিনি দোকানে থাকায় কিছুটা কম বেড়েছে। বাড়তি দামের চিনি ৭০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন গতকাল রাতে জানান, গত বৃহস্পতিবার শেষ কেনাবেচা হয়েছে দুই হাজার ৯৩০ টাকা থেকে দুই হাজার ৯৪০ টাকা বস্তা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে মার্কেট বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল থেকে চিনির দাম বেড়ে যায়। একদিনের মধ্যে বস্তায় ২০০ টাকা বেড়েছে।
এ বাজারের অন্যান্য পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, শনিবার প্রতি বস্তা চিনি সর্বোচ্চ তিন হাজার ২০০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। শবেবরাতের আগে মেঘনা গ্রুপ চিনির সরবরাহ বন্ধ করেছে। সিটি গ্রুপ চিনি কম ছাড়ছে। ইগলু ব্র্যান্ডের চিনির সরবরাহ আগে থেকেই কম রয়েছে। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাইকারি বাজারে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে।
যদিও ভবিষ্যতে কেনাবেচার জন্য চিনির বিক্রয় আদেশের (এসও) দাম তেমন বাড়েনি। গতকাল এসও কেনাবেচা অনুযায়ী প্রতি বস্তা চিনির দাম পড়ছে দুই হাজার ৯১৬ টাকা। যা আগের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। তবে রেডি চিনির এসও কেনাবেচায় দাম বেড়েছে। প্রতি বস্তার দাম পড়ছে তিন হাজার ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর