অসহায়দের পাশে দাঁড়ান

বেঁচে থাকার সর্বশেষ পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। একপাল নাবালক ছেলেমেয়ে, তাদের জীবনে নানামুখী দুঃখ, কষ্ট ও অশান্তি লেগে আছে। ঝগড়া-ফাসাদ এমনকি হাতাহাতি ও মারামারি প্রভৃতি তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ পরিস্থিতিতে দুর্বল, অসুস্থ ও অসহায় স্বামী ক্ষণিকের শান্তির আশায় কখনো ঘরছাড়া, অথবা আবারো বিয়ে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জনমদুঃখী মা নাবালকদের নিয়ে পড়েন অথই সাগরে। এরপর ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, সঠিক-ভুল এবং সুনাম-দুর্নাম কিছুই মাথায় আসে না। শত কষ্ট ও দুঃখের মাঝে কেবলই সন্তানদের দু’বেলা আহার জোগাড়ের জন্য কখনো অন্যের বাসায় ঝি, আবার কখনো বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ, যথা- ভিক্ষুক, বেদে ও চোর প্রভৃতিসহ সমাজের সবচেয়ে নিন্দনীয় ও নিকৃষ্ট কাজটিও করতে দ্বিধা করে না।
গরিব ও অশিক্ষিত মা-বাবা সব কিছু খুইয়ে একমাত্র সন্তানকে মানুষ করেছে। বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা দুর্বল, অসুস্থ ও অক্ষম হওয়ায় সন্তানের আয়ের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হন। বিদ্বান সন্তান ওপর তলার মানুষ। এ অবস্থায় সন্তান মা-বাবাকে না পারে ফেলতে, না পারে পুরোপুরিভাবে মেনে নিতে। সামান্য বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-ফাসাদ প্রভৃতি অশান্তি সংসারে লেগে থাকে। পরিশেষে বৃদ্ধ মা-বাবা সন্তানের সংসারে অতিরিক্ত ঝামেলা এবং তারা (মা-বাবা) বঞ্চনা, গঞ্জনা ও অশান্তি সইতে না পেরে অবশেষে স্বেচ্ছায় সন্তানের গৃহত্যাগ অতঃপর ভিক্ষা পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়।
টাকা না দিলে পা ছাড়ব না, ১০-১২ বছরের মেয়ে পথচারী যুবকের পা শক্ত হাতে ধরে ওভার ব্রিজের ওপর মিরপুর-১ ঢাকায় ভিক্ষা করছে। এর ৮-১০ হাত আগে আধাবয়সী মহিলা এবং পশ্চিমে ব্রিজের ওপর দাড়ি ও গোঁফেভরা এবং মাথায় উষ্ক খুষ্ক চুলওয়ালা পুরুষ মাথা নিচু অতঃপর চুপ করে বসে। পুরুষ-মহিলা উভয়ের গায়ে ময়লা ও ছেঁড়া কাপড় এবং দুর্বল, ক্ষীণ ও রোগা শরীরের অধিকারী। বুঝতে অসুবিধা হলো না এরাই ওই মেয়ে ভিক্ষুকের মা ও বাবা। সুন্দরী তরুণীর বেশ ধারণ, যথা- দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণ করার মতো পোশাক, হাতে নানা রঙের চুড়ি, নাক, কান ও গলায় হরেক রকমের ইমিটেশনের গয়না ইত্যাদি অতঃপর দাদা-দাদু, ভাই-বোন, নানা-নানু ও চাচা-চাচী প্রভৃতি মিষ্টিমধুর সম্ভাসনসহ দুই-পাঁচ টাকা ভিক্ষা দিন- ঢাকার ভেতর বিভিন্ন বাসে দুইজনের ছোট দলে বিভক্ত হিজড়া যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চাইতে দেখা যাচ্ছে। ওই হিজড়া একবারে যুব এবং সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারীসহ বুদ্ধিমানও বটে।
কুমিল্লা শহরে ঢোকার পথে এক ব্যক্তি বাসে উঠেই এতিমখানা, মাদরাসা ও মসজিদের উন্নয়নের কথা বলে যাত্রীদের কাছে মুক্তহস্তে সাহায্য (ভিক্ষা) চাইতে শুরু করে। ২০০৭-২০০৯ সালেও এ ব্যক্তিকে (যুবক) একইভাবে ভিক্ষা করতে দেখেছি। দেশের বেশির ভাগ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অন্যদের দেয়া সাহায্য ও সহযোগিতায় গড়ে ওঠে এবং চালিত হয়। নিঃস্ব ও গরিব, যথা বৃদ্ধ ও দুর্বল ব্যক্তিদের এ কাজ (ভিক্ষা) করলেও মানায়। কিন্তু কেন সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারী যুবক জীবন ধারণের জন্য ধর্মকে পুঁজি করে ভিক্ষাপেশা বেছে নিয়েছে?
হিজড়া, যুব ও ধর্মের নামে ভিক্ষাপেশায় নিয়োজিতদের যথাযথভাবে শিক্ষা (স্বশিক্ষা, গুরুর দীক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানিক) এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে অন্যান্য সবল, সুস্থ ও দক্ষ মানুষের মতো জাতীয় উন্নয়নে শরিকসহ আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। বিশ্বে তথা সমাজ ও দেশের ধনাঢ্য, জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত, বিদ্বান ও বুদ্ধিজীবী এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে অসীম ক্ষমতাধর প্রমুখ ব্যক্তিগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, যেসব মানুষ চরমভাবে বঞ্চিত, বিপথগামী ও জনমদুঃখী হিসেবে পরিচিত তাদের পাশে দাঁড়ান। নয়তো কঠিন শোষণ, চরম বঞ্চনা ও গঞ্জনায় কেবলই ধুঁকে ধুঁকে অকাল মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনা ছড়া- এসব দুঃখী, বঞ্চিত, নিঃস্ব ও অবহেলিতদের কোনো পথ নেই। তাদের প্রতি একটু সাহায্য ও সহযোগিতার হাত কি বাড়িয়ে দিতে পারেন না?

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর