কালকিনিতে সাংবাদিককে বেঁধে নির্যাতন, ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা

মাদারীপুরের কালকিনিতে গত শুক্রবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কালকিনি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম। পরে তাকে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজ।

রবিবার সকালে মাদারীপুর প্রেসক্লাবসহ বেশ কটি সংগঠনের উদ্যোগে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শহিদুল ইসলামের নিঃর্শত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপরে নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদ সংগ্রহ পূর্ব এনায়েত নগর ইউনিয়নে যান সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম। এ সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালাচ্ছে এমন ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক শহিদুল ইসলামের ওপর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদল তালুকদারের সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাৎক্ষনিক থানায় খবর দিলে পুলিশ ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে কালকিনি থানায় নিয়ে আসে। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছোট ভাই সরোয়ার তালুকদার (৩০) ও নাজমুল খান (১৭) নামে দুইজনকে আটকও করা হয়।

বিকালে এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপের মুখে পড়ে ওই সাংবাদিকের মামলা না নিয়ে উল্টো থানায় তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। কালকিনির প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। পুলিশ মামলা না নিয়ে, উল্টো থানায় হাজতে আটকে রেখেছে। এরপর সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কালকিনি উপজেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে আবারো থানাহাজতে আটকে রাখা হয়। এর তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাই।

হামলার শিকার সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই আমার ওপর ১০-১২ জন অতর্কিত হামলা চালায়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে মারধর করে। এরপর আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে স্থানীয় একজন পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ গিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদল তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।

মাদারীপুর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্ছিত হলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাইসহ দুইজনকে আটক করা হয়। তারপরও মামলা নিয়ে পুলিশ তাকে হয়রানি করেছে, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কালকিনি থানায় গিয়ে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্দু বালাবলেন, স্থানীয় এমপি বাহাউদ্দিন নাছিমের সাথে সমঝোতা করলেই ওই সাংবাদিককে ছাড়া হবে। তার নির্দেশ ব্যতীত কোনো অবস্থাতেই সাংবাদিক শহিদুলকে ছাড়া যাবে না।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। তবে মামলা হওয়ায় বিষয়টি এখন আইনের বিষয়। তারপরেও সমাধানের চেষ্টা করছি।

এদিকে স্থানীয় এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দাবি করেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।

ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর