ক্ষমতায় ফিরবো বলে রোগ-শোক নেই: এরশাদ

সাবেক স্বৈরশাসক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আবার তার দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চান। আর এজন্য কোনো রোগ-শোক তার কাছে ভিড়তে পারে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

এরশাদ বলেন, ‘আমি বসে আছি ওই দিনের জন্য যেদিন জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে। তাই রোগ শোক আমার কাছে আসতে পারে না। আমি এগিয়ে চলি দুর্দান্ত সাহস নিয়ে। এগিয়ে চলি জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনার জন্য। আমার পথে কোনো বাধা নাই, কোনো বাধা কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না।’ এজন্য দলের নেতাকর্মীদের জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার পরাপর্শ দেন জাপা চেয়ারম্যান।

সোমবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ছাত্রসমাজের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে এরশাদ এসব কথা বলেন।

ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমতায় আসলাম, কেন ক্ষমতা গ্রহণ করলাম এটা তোমাদের জানতে হবে। সেনাপতি ছিলাম আমার ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল না। জাস্টিস সাত্তার আমাকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সেদিন আমার জায়গায় অন্য কোনো সেনাপ্রধান থাকলে তাদেরও ক্ষমতা গ্রহণ করতে হতো। আমি ক্ষমতা লোভী ছিলাম না, আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। এর থেকে বড় একজন সৈনিকের জীবনে আর কিছু হতে পারে না। ১৯৮৪ সালে আমার দল ছিল না। আমি নির্বাচন দিয়েছিলাম। নির্বাচনে যদি তারা আসত তবে আমাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে হতো। কিন্তু তারা (বাকি রাজনৈতিক দল) আমাকে সহায়তা করেনি। না হলে জাতীয় পার্টির উত্থান হতো না।’

দল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে এরশাদ বলেন, ‘১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠিত করি প্রথমত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বিতীয়ত সামরিক শাসন চিরদিনের জন্য বিতাড়িত করার জন্য। জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য, ইসলামের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য।’

মানুষের স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের অভাবে সন্ত্রাসবাদের উত্থান হচ্ছে জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘মানুষের কথা বলার সুযোগ নেই, লেখার সুযোগ নেই, বলার স্বাধীনতা নেই। মানুষের মনে অনেক দুঃখ, কর্মসংস্থান নেই। কোটি কোটি ছেলেমেয়েদের চাকরি নাই। এ কারণে সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি।’

এরশাদ বলেন, ‘আজ রাজপথ চলার মতো নাই। কথা বলার অধিকার নাই। আমরা বাঁচার অধিকার চাই, আমরা এই দেশ চাই না। আমাদের প্রত্যাশা ছিল শান্তিপূর্ণ দেশ। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ এখন নাই।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন করতে আমার দলের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছিলাম। আমার প্রশ্ন সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন কি আছে? নাই! সেদিন যদি অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করত, তবে এই সমস্যা দাঁড়াতো না। শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি এটাতো আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষাঙ্গন সুষ্ঠু থাকুক, সুন্দর থাকুক, লেখাপড়ার পরিবেশ বজায় থাকুক।’

এরশাদ বলেন, ‘আমাদের স্বাধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রামী ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীন দেশে ছাত্রদের রাজনীতিতে নামতে হবে এটা কখনো চিন্তা করতে পারিনি। স্বাধীন দেশে ছাত্রদেরকে রাজনীতিতে নামতে হবে কেন? এটা আমার প্রশ্ন।’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম সুষ্ঠু গণতন্ত্র। আমরা কি বলতে পারি সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে? আমরা চেয়েছিলাম পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা। এখন কাড়াকাড়ি আর পরস্পরের প্রতি কটূক্তি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উত্থান হবে না।’

রওশন বলেন, ‘দেশের ১৬ কোটি মানুষের ১০ কোটি ৩১ লাখ কর্মক্ষম। দেশে কর্মসংস্থান আছে পাঁচ কোটি ৮১ লাখ। পাঁচ কোটি কর্মক্ষম মানুষের কোনো কাজ না থাকায় এতো সন্ত্রাস-জঙ্গির উত্থান হচ্ছে।’

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘কর্মক্ষম মানুষের কাজ নেই বলে তারা হতাশ হয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। মাদক ও সন্ত্রাসে ঝুঁকে পড়ে।’ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে জঙ্গি-সন্ত্রাসের উত্থান হবে না বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ মো. ইফতেকার আহসান হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর