মনোজ্ঞ ডিসপ্লেতে ফুটে ওঠে স্বাধীনতার নানা গৌরবগাথা

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। পাকিস্তানের আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সূচনা হয় স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের, ঘোষিত হয় স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবি। এদিনেই শুরু হয় সর্বাত্মক এক জনযুদ্ধের, ২৬৬ দিনের সেই জনযুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন রাষ্ট্র, আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সেই ঐতিহাসিক দিনটি ছিল গতকাল রোববার। দেশের ৪৭তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে পৌঁছে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড কমান্ডার শেখ আমিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ ও হেঁটে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিশু-কিশোর সংগঠনের পরিবেশনায় মার্চপাস্ট ও মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগও করেন তিনি।
স্টেডিয়ামের মাঠজুড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতি ও ছবি এবং মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি দিয়ে মনোরমভাবে সাজানো হয় প্রতিটি ডিসপ্লে। আর গ্যালারিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের চারশ’ ছাত্রীর পরিবেশনায় ডিসপ্লের মাধ্যমে রংধনু, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বড় পর্দায়ও সরকারের উন্নয়নমূলক কাজসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয় এ সময়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে আরো বেশি করে নজর দেয়ার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, আমাদের শিশুরা মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। বাবা-মা ও অভিভাবকদের কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে। আর মাদক কিংবা কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।
তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন উন্নত জীবন পায়। সৎ চরিত্রের হয়, লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করি। আমাদের বর্তমানকে আমরা উৎসর্গ করি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য।
স্টেডিয়ামে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখবে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা কিংবা আত্মহননের কথা বলেনি। বরং ইসলাম ধর্ম বলেছে, আত্মঘাতী হওয়া কিংবা আত্মহনন মহাপাপ, গুনাহর কাজ। যারা আত্মহনন করে, তারা কখনো জান্নাতে যায় না, জাহান্নামে যায়। তারা কখনো বেহেশতে যেতে পারে না।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য তৈরি হতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের প্রজন্মই আগামী দিনে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমি যেমন প্রধানমন্ত্রী হয়েছি; আজকে যারা শিশু, আগামী দিনে তাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। মন্ত্রী হবে, সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা হবে। সুতরাং নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে সোনার ছেলেমেয়ে হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
শিশু-কিশোরদের প্রতি দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, সুন্দর জীবন গড়বে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর