গউছের ঘোষণা উন্নয়নের মাধ্যমে হবিগঞ্জবাসীর ঋণ শোধ করবো

ছাত্রদল থেকে যুবদল। তারপর শ্রমিক দল। সবশেষে বিএনপি। সবখানেই সফল। হবিগঞ্জের আলোচিত এক নেতা। ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে কারাগার থেকেই কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হন। এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে পরিচালনা করছেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ জিকে গউছ। প্রথম দফায় নির্বাচিত হয়েই বদলে দেন হবিগঞ্জের চেহারা। এর প্রতিদান দেন ভোটাররা। তৃতীয় দফায় কারাগারে বসে নির্বাচন করেন। জয়ী হন বিপুল ভোটে। জিকে গউছ জনসেবাকে এবাদত মনে করেন। আর তাই পৌরসভায় নাগরিকসেবা নিশ্চিতের জন্য দিবারাত্রি পরিশ্রম করেছেন। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। পৌরসভাকে জনগণের সেবাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বিনিময়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আর সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশাল ব্যাংক অধ্যুষিত এলাকায় পরপর তিনবার মেয়র পদে বিজয়ী হন। তিনি বলেন, জনগণের ভালবাসাই আমার জন্য কাল হয়েছে। এ জন্যই রাজনীতি আর ভোটের মাঠে পরাজিত শক্তি আমাকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র শুরু করে। পবিত্র হজব্রত পালনে মক্কা শরিফে থেকেও ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনার ১০ বছর পর আসামিভুক্ত করা হয়। এ ঘটনাকে জীবনের চরম বেদনাহত ও নির্মম ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন মেয়র গউছ। আল্লাহর নামে শপথ করে বলেন, কিবরিয়া হত্যা বা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকলে আল্লাহ যেন আমার সন্তান ও পরিবারের উপর গজব নাজিল করেন। যারা আমাকে মিথ্যা ও অন্যায়ভাবে কলংকিত একটি ঘটনায় জড়িয়েছে আল্লাহ যেন এর সুবিচার করেন। ২৩শে মার্চ জল্পনা-কল্পনা আর নাটকীয়তা শেষে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় পৌরসভায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রথম দিনের কর্মদিবস শেষে মানবজমিনের মুখোমুখি হন মেয়র গউছ। একান্ত আলাপ চারিতায় তিনি বলেন, ২ বছর ৩ মাস পর বৃহস্পতিবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, পরপর তিনবার নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু পূর্ণ মেয়াদে একবারও দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। প্রতিবারই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র উন্নয়নকে ব্যাহত করেছে। সর্বশেষ তার অনুপস্থিতিতে পৌরসভার দেনা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে পৌরসভার স্থিতি ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বর্তমানে স্থিতি আছে ১৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। ২০০৪ সালে ঋণ ছিল ৩ কোটি টাকা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিবারই ঋণের বোঝা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করি। অথচ আমার বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা দেয়া হলেও পৌরসভার দুর্নীতির কোনো মামলা দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ আমি দুর্নীতি করিনি, কাউকে দুর্নীতি করতেও দিইনি। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে প্রথম দফায় চেয়াম্যান নির্বাচিত হই। ১/১১ সরকারের সময় বিভিন্ন মামলায় ৫৯১ দিন কারাগারে আটক ছিলাম। পরে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হই। মেয়র গউছ বলেন, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ২০১৪ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটে তিনি আসামিভুক্ত হন। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এসব মামলায় কারাগারে থেকে পৌর নির্বাচনে অংশ নেন। বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। প্যারোলে মুক্ত হয়ে শপথ গ্রহণ করেন। ফৌজধারী মামলায় কারাগারে আটক থাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এছাড়াও ২০০৪ সালের ২১শে জুন দিরাই বাজারে সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের একটি সমাবেশে বোমা হামলার মামলায়ও তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। গত ৪ঠা জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩শে মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাশ। এ সময় পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাশ তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর বিশাল বহর নিয়ে বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জি কে গউছ হবিগঞ্জের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। গউছ মানুষের জন্য কাজ করে। জেল থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ দিয়েছে। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। বিএনপি ছাড়ার জন্য অনেক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু গউছ নথি স্বীকার করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণা ও কথাগুলোকে জীবনের চরম পাওয়া হিসেবে অভিহিত করেন জিকে গউছ। জিকে গউছ বলেন, তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়ে দুই বছরেরও অধিক সময় কারাগারে ছিলাম। সেখানে আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। মেরুদণ্ডে আঘাত করা হয়েছে। আমি আজ শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমার মুক্তির জন্য যারা আন্দোলন করে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন, ফেরারি জীবন কাটিয়েছেন, তাদের ঋণ শোধ করা যাবে না। গউছ বলেন, আমার দুঃসময়ে হবিগঞ্জবাসী আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে নতুন জীবন দিয়েছেন। মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুলে আমার জন্য কেঁদেছেন। আমি সবার কাছে আমৃত্যু ঋণী হয়ে থাকব। উন্নয়নের মাধ্যমে এই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর