দেশি টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয়তা

আমাদের দেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দর্শকসংখ্যা দিনে দিনে কমছে। ক্রমেই দেশি দর্শক বিদেশি চ্যানেলমুখী হচ্ছেন। আগে এই প্রবণতা শহরাঞ্চলের দর্শকদের মধ্যে পরিলক্ষিত হলেও এখন গ্রামীণ এলাকার টিভি দর্শকরাও ব্যাপকহারে বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার প্রতি ঝুঁকছেন। কেবল টিভি বিস্তার গ্রামের মানুষকেও অবাধে দেশি-বিদেশি অগণিত চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন হাতে ধরা রিমোটের বোতাম টিপে ইচ্ছেমতো স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাস, সনি, কালারস, জি টিভি প্রভৃতি চ্যানেলের বাংলা-হিন্দি সিরিয়াল, সিনেমা, গেম শো, রিয়েলিটি শো, নাচ-গান, কৌতুকের অনুষ্ঠান হরদম দেখছেন তারা। একসময় তাদেরকে শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। এখন আগের সেই অবস্থা আর নেই। কেবল টিভির দ্রুত বিস্তার আমাদের ঘরোয়া বিনোদনে দারুণ বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও। যখন এদেশে প্রথম স্যাটেলাইট টিভির প্রচলন হয়েছিল নব্বই দশকের গোড়ার দিকে, তখন তা মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রিক ছিল। মহানগরীতে পাড়ায় পাড়ায় ডিশলাইন সংযোগ গ্রহণের মাধ্যমে তখন থেকে বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার প্রথম সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরপর প্রায় আড়াই দশক সময়ে এদেশে কেবল টিভির বিস্তারের মাধ্যমে যেমন অগণিত বিদেশি চ্যানেল দেখার বিরাট সুযোগ হয়েছে; একই সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রায় দু’ডজন বাংলাদেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠান প্রচারের অনুমোদন লাভ করে দর্শকদের সামনে এসেছে। শুরুতে যখন মাত্র কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে তখন দর্শক অনেক আশাবাদী হয়ে তা দেখতে শুরু করেছিল। সবার প্রত্যাশা ছিল, প্রতিটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তাদের নিজ নিজ স্ল্লোগানে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূরণের মাধ্যমে যথাযথই দর্শকের প্রিয় হয়ে উঠবে। দিনে দিনে তাদের দিগন্ত প্রসারিত হবে। দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতি, পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবনধারা, ইতিহাস, সাহিত্য, সংগীত, চিন্তাভাবনা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হল, বাংলাদেশের ২৬টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অধিকাংশই দেশের ভেতরেই দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের টিভি নাটক এবং ধারাবাহিকের একসময় দারুণ সুনাম এবং বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল, যা দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়েছে বলা চলে। এখন দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি দিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে নাটক-ধারাবাহিকের নামে যা দেখানো হয় তা দেখার মতো ধৈর্য বেশিরভাগ দর্শকেরই নেই। নিম্নমানের কাহিনি, দুর্বল অভিনয়, যাচ্ছেতাই নির্মাণ, অহেতুক কাহিনিকে টেনে লম্বা করার প্রবণতা দর্শকদের ভিনদেশি সিরিয়াল দেখতে উত্সাহিত করেছে বললে অন্যায় হবে না। একসময়ে বিটিভিতে প্রচারিত ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘ঢাকায় থাকি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি ধারাবাহিক নাটক এবং ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’, ‘সপ্তবর্ণা’, ‘অন্তরালে’ দেখার জন্য দর্শক প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে যথাসময়ে ঘরে ফিরতেন। যখন এই ধারাবাহিক নাটক এবং অনুষ্ঠানগুলো দেখানো হতো রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত। অথচ এখন কোনো টিভি চ্যানেলে কোনদিন কখন কী নাটক, ধারাবাহিক দেখানো হয় তার খোঁজ রাখেন না বেশিরভাগ দর্শক। এখনও যে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলোতে ভালো নাটক, ধারাবাহিক দেখানো হয় না তা বলা যাবে না। তবে সেই নাটক কিংবা ধারাবাহিক দেখতে বসে দর্শক ক্রমাগত বিজ্ঞাপনের চাপে পিষ্ট হতে হতে একসময় রিমোটের বোতাম টিপে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বিজ্ঞাপনের আধিক্য দর্শকদের বাংলাদেশি চ্যানেলবিমুখ করে তুলছে। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা বিজ্ঞাপন প্রচার তো রয়েছেই, তাছাড়া যেকোনো খবর বা অনুষ্ঠানের মধ্যে টিভিপর্দায় সেকেন্ডে ভেসে উঠছে নির্বাক বিজ্ঞাপন সিরিজ। টিভিতে নাটক অথবা খবর প্রচারকালীন সময়ে পর্দার চারপাশে অগণিত বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ির ফলে মূল অনুষ্ঠানটি চাপা পড়ে যায়, বিজ্ঞাপন মেলাই মুখ্য হয়ে ওঠে। বিজ্ঞাপনের এত নির্যাতন সহ্য করে কোনো ভালো বোধসম্পন্ন দর্শক আমাদের দেশি টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান বা খবর দেখতে যাবে কোন দুঃখে? অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রায়ই বলা হয়, ‘এখন আমরা ছোট্ট বিরতিতে যাচ্ছি, খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি, কোথাও যাবেন না’। অথচ বাস্তবতা হল, ঘোষিত ছোট্ট বিরতি আর ছোট্টটি থাকে না। একটানা ১৫-২০ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচারের উদাহরণ প্রতিদিনই লক্ষ করা যায় বিভিন্ন চ্যানেলে। বাধ্য হয়ে দর্শক অন্য চ্যানেলে চোখ রাখেন। সেখানে অপেক্ষাকৃত ভালো কিছু পেলে তা দেখতে শুরু করেন, আগের চ্যানেলের ভালো নাটক বা অনুষ্ঠানটির কথা তখন ভুলে যান দর্শক। যার ফলে খুব কম সংখ্যক দর্শকই বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান, নাটকের সম্পূর্ণটা দেখছেন বর্তমানে। টিভি চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিরা দর্শকদের কী মনে করেন জানি না। তাদের এটা বোঝা উচিত, বিজ্ঞাপনের চাপে দর্শক যত বেশি পিষ্ট হবেন ততই তারা টিভির অনুষ্ঠানমালা দেখা থেকে দূরে সরে যাবেন। দর্শক যদি আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো থেকে চোখ সরিয়ে নেন তাহলে সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিতে যাবে কেন কোম্পানিগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ভারতীয় বাংলা-হিন্দি টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হল, বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নয়, বিদেশি চ্যানেলগুলোর অগণিত বাংলাদেশি দর্শকের জন্যই আজকাল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে দেশীয় পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচারের বিশাল আয়োজন করছে অনেক কোম্পানি। আগামীতে এ প্রবণতা আরও জোরদার হবে, ধারণা করা যায়। এর ফলে অতিমাত্রায় মুনাফালোভী বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন পাবে না অনুমান করা যায়। তখন তাদের একই সঙ্গে আম ও ছালা হারানোর অবস্থা হবে। অনুমোদন দেওয়ার সময় নতুন নতুন টিভি চ্যানেল দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ক্রীড়া বিনোদন ক্ষেত্রে কী ধরনের গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হয় না সাধারণত। দর্শকদের স্থায়ীভাবে ধরে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় দুই ডজন টিভি চ্যানেলের মধ্যে কোনটি বিশেষ কারিশমা দেখাতে পেরেছে? তেমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু থাকে না। বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদ ও টক শো দেখে সাধারণ দর্শক যারপরনাই বিরক্ত। অনেকে এগুলোকে বিটিভির ক্লোন বলে অভিহিত করছেন। এসব বেসরকারি টিভি চ্যানেল গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের এখানে বিশেষায়িত চ্যানেলের অভাব রয়েছে। স্টার স্পোর্টস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, কার্টুন নেটওয়ার্ক, নিক প্রভৃতি টিভি চ্যানেলের কাছে তো কোনো দর্শক খবর শুনতে চায় না। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার দৈন্য এভাবেই ফুটিয়ে তুলছেন অনেক নির্মাতা। গ্রামীণ কিংবা শহুরে পটভূমির নাটকে এমনসব দৃশ্যের অবতারণা করা হচ্ছে, যা দেখে দর্শক হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পান না। এসব টিভি নাটক, ধারাবাহিক, টেলিফিল্মে অনেক জনপ্রিয় বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীর সমাবেশ ঘটানো হলেও কাহিনি অবাস্তব এবং কষ্টকল্পিত হওয়ায় দর্শক সেগুলো সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না। পুরো নাটকে কৌতুকাভিনয় আর অতি অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন ভোলানোর চেষ্টাকে ছেলেমানুষি ব্যাপার মনে হয়। ভাঁড়ামো আর অশালীন অঙ্গভঙ্গি কথাবার্তাকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটক, ধারাবাহিকগুলো দেখে এখন প্রায় দর্শক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এগুলো দেখে অযথা সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আজকাল অনেক নাটক, ধারাবাহিক নির্মাতার মধ্যেই এ অসুস্থ প্রবণতাটি লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলের অভাব না থাকলেও এই সময়ের দর্শকদের মন ভরানোর মতো উন্নতমানের উপভোগ্য টিভি সিরিয়াল এবং বিনোদনমূলক টিভি শোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে-এ কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। কয়েকটি প্রাইম টিভি চ্যানেল মাঝেমধ্যে মানসম্পন্ন উপভোগ্য ধারাবাহিক নাটক প্রচার করলেও মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের চাপে অতিষ্ঠ দর্শক সেগুলো দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খুব স্বাভাবিকভাবেই। বিভিন্ন চ্যানেলের ঈদ আয়োজন ঈদের আনন্দ, খুশির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও আনন্দের এ বিশেষ আয়োজন এখন রীতিমতো যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। বিরক্তির উদ্রেক করছে। দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শুদ্ধ বাংলা ভাষাকে হেয় করছে। নতুন প্রজন্মকে জগাখিচুড়ি মার্কা ভাষা, অপসংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে। কমেডি নাটকের নামে ভাঁড়ামি, পেটে সুড়সুড়ি দিয়ে, বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে অযথা হাসানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ব্যর্থতা বিদেশি টিভি চ্যানেলের প্রসার ঘটাচ্ছে এখানে। ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন ঘটছে এভাবে। যা আমাদের চিরায়ত চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা বেমালুম পাল্টে দিচ্ছে। চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর নিদারুণ ব্যর্থতার ফলশ্রুতিতে। ভিনদেশি টিভি চ্যানেলের আদিরসাত্মক সিরিয়াল ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখে আমরা সামাজিক মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অতীত ঐতিহ্য, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, নিজস্ব আচার কৃষ্টি, নর-নারীর চিরায়ত আদর্শ, সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলো হারাতে বসেছি। এসব কারণে আজকের তরুণ প্রজন্ম যৌন বিকৃতিসহ বিভিন্ন অপরাধনির্ভর মূল্যবোধের অনুসারী হয়ে পড়ছে। ভারতীয় এবং অন্যান্য বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলো কেন, কীভাবে চুম্বকের মতো দর্শক টানছে তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে আমাদের টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে। তাদের চ্যানেলের কনটেন্ট আমাদের চ্যানেলের তুলনায় অনেক জমজমাট এবং আকর্ষণীয় দর্শক আটকে রাখার কায়দাটা তারা ভালো বোঝে। সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ করা, সহনীয় সময়ের বিজ্ঞাপন বিরতি, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা সবই বেশ গোছানো। আমাদের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর কর্তাব্যক্তিদের উপলব্ধি করা উচিত-দর্শকদের বোকা বানানো এবং ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন দর্শক অনেক সচেতন এবং বুদ্ধিমান। যা গেলাতে চাইবেন তা দর্শক আর আগের মতো গিলছে না, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অন্যদিকে। অনুষ্ঠান নির্মাণে যথাযথ গবেষণা, পরিকল্পনা, পেশাদারিত্ব, প্রশিক্ষণ ও জনরুচি তৈরিতে অবদান রাখতে না পারলে মানুষ টিভি দেখবে না। এছাড়া টিভিপর্দায় এখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম নয়। ইউটিউব, অনলাইন টিভিসহ সারা পৃথিবীর টিভি চ্যানেলগুলোর দিকে চোখ রাখছেন আমাদের অনেক দর্শক। অন্যদিকে টেলিভিশনের এক বিকল্প পর্দা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইউটিউব। এখন অনেকের জন্য ইউটিউব রীতিমতো এক নেশায় পরিণত হয়েছে। ভিডিও দেখা ওয়েবসাইট ইউটিউব এখন ঘরোয়া বিনোদনের বড় এক মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিল্পী প্রযোজকেরা গান, মিউজিক ভিডিও, নাটক প্রকাশের জন্য বেছে নিচ্ছেন ইউটিউব। আজকাল অনেক নাটক, গানের ভিডিও, শর্টফিল্ম ইউটিউবে কোটিবার দেখার উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোও কোটি কোটি দর্শক হারাচ্ছে। আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর অতি বাণিজ্যিক মনোভাব তাদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনছে। যাদের জন্য তারা অনুষ্ঠান প্রচার করছে, সেসব অগণিত দর্শক দিনে দিনে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি রেটিংস শুধুই নিম্নগামী হচ্ছে। একসময়ে তা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাবে সন্দেহ নেই। ভিনদেশি টিভি চ্যানেলের পক্ষপাতী আমরা কেউই নই। তবে দেশি চ্যানেলগুলোর শোচনীয় ব্যর্থতা আমাদের দর্শকদের মনোযোগ, আগ্রহ কৌতূহলকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। ফলে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রকট আকার ধারণ করেছে। মাত্র কয়েকটি বিদেশি টিভি চ্যানেলের কাছে আমাদের প্রায় দুই ডজন চ্যানেলের পরাজয় দুঃখজনক। যেকোনো বিবেকবান, দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষ তাতে ব্যথিত, আলোড়িত না হয়ে পারে না। অতি বাণিজ্যিক মানসিকতা ত্যাগ করে দর্শকদের কাছে দেওয়া কমিটমেন্ট অনুযায়ী সময়োপযোগী বিনোদন সম্ভার টিভিপর্দায় আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে উত্সাহী দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে আমাদের সিনেমা শিল্পের মতো চরম বিপর্যয় নেমে আসবে টিভি অঙ্গনেও। একসময়ে অধিকাংশ টিভি চ্যানেল পরিত্যক্ত হিসেবে বিবেচিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা সবাই দেশীয় সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশ চাই। নিজস্ব কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যের অনুসারী হয়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে সাজাতে চাই। অথচ আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে সংস্কৃতির সর্বনাশ। আমরা আশা করব, বিদেশি টিভি সিরিয়ালের অন্ধ অনুকরণ কিংবা যাচ্ছেতাই মানের টিভি ধারাবাহিক নাটক অথবা টিভি শো দিয়ে দর্শকদের প্রতিনিয়ত প্রতারণা বাদ দিয়ে, বিজ্ঞাপনের বাহুল্য কমিয়ে দর্শকদের পরিপূর্ণ বিনোদন দিতে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো মনোযোগী হবে। লেখক : ব্যাংকার

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর