শীর্ষ ধনীদের কার কত সম্পদ

বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের জন্য গেল বছর ছিল রেকর্ড সৃষ্টিকারী। আগের বছরের তুলনায় বিশ্বজুড়ে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ১৮১০ থেকে হয়েছে ২০৪৩। এবারই প্রথমবারের মতো ফোর্বসের তালিকায় স্থান পেয়েছে ২ হাজারের বেশি বিলিয়নিয়ার। আর তাদের মোট সম্পদ ১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি ডলার। এটাও নতুন রেকর্ড। ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর বিলিয়নিয়ারদের তালিকা করছে ৩১ বছর ধরে। এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২৩৩ জন।
এবারও বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস। টানা চার বছর ধরে শীর্ষ ধনী হিসেবে নিজের অবস্থান অক্ষুণ্ন রেখেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা। ২৩ বছরের মধ্যে ১৮ বছরই বিশ্বের সেরা ধনীর তকমা পেয়েছেন তিনি। আগের বছর তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৫০০ কোটি ডলার। এবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬০০ কোটি ডলারে। বিশ্বের যে কারও তুলনায় অ্যামাজনের জেফ বেজসের বছরটি ছিল সব চেয়ে সেরা। নিজের সম্মদের ভাণ্ডারে তিনি যোগ করেছেন ২৭৬০ কোটি ডলার। বর্তমানে মোট সম্পদের পরিমাণ ৭২৮০ কোটি ডলার। প্রথমবারের মতো তিনি ধনীদের তালিকায় শীর্ষ তিন-এ উঠে এসেছেন। আগের বছর তার অবস্থান ছিল ৫ এ। দ্বিতীয় সেরা বছর কাটিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। ২০১৬’র নভেম্বরে ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সব থেকে বেশি সম্পদ বৃদ্ধি উপভোগ করেছেন তিনি। ১২ মাসে ১৪৮০ কোটি ডলার সম্পদ যোগ হওয়াটা ওয়ারেন বাফেটের জন্য তালিকার ২য় স্থান ফের দখলের জন্য ছিল যথেষ্ট। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৬০ কোটি ডলার। বাফেটকে সরিয়ে আগের বছর তালিকার ২য় স্থানে থাকা জারার প্রতিষ্ঠাতা আমানসিও ওরতেগা এ বছর রয়েছেন ৪র্থ নম্বরে। গত বছর ওরতেগার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। মোট সম্পদের পরিমাণ ৭১৩০ কোটি ডলার। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ প্রথমবারের মতো উঠে এসেছেন ৫ নম্বরে। ১২ মাসে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১১৪০ কোটি ডলার। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৬০০ কোটি ডলার। তারপরই রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম হেলু। ১২ বছরে প্রথমবারের মতো তিনি শীর্ষ ৫ থেকে ছিটকে পড়লেন। তালিকায় ৭ম অবস্থানে রয়েছেন ওরাকলের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা ল্যারিও এলিসন। তার সম্পদের পরিমাণ ৫২২০ কোটি ডলার। সমপরিমাণ সম্পদ ৪৮৩০ কোটি ডলার নিয়ে ৮ম অবস্থানে রয়েছেন কোচ ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও চার্লস কোচ এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিড কোচ। তালিকায় ১০ম অবস্থানে রয়েছেন ব্লুমবার্গের সিইও মাইকেল ব্লুমবার্গ। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৭৫০ কোটি ডলার।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এবারের তালিকায় নতুন প্রবেশ করেছেন ১৯৫ জন। নতুন বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে সব থেকে বেশি এসেছে চীন থেকে। মোট ৭৬ জন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন বিলিয়নিয়ার আছেন ২৫ জন। নতুনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্যাটাগোনিয়া স্পোর্টসওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা ইভন চৌইনার্দ। ভাইকিং ক্রুসেস-এর প্রতিষ্ঠাতা নরওয়ের টর্স্টেইন হ্যাগেন। ইউএসন হেজ ফান্ড টাইকুন ক্লিফ অ্যাসনেস এবং তার দুই অংশীদার জন ও প্যাট্রিক কলিসন। ২৬ বছরের জন কলিসন এখন বিশ্বের সব থেকে কনিষ্ঠতম সেলফ-মেড বিলিয়নিয়ার। স্ন্যাপচ্যাটের ইভান স্পাইজেলের থেকে তিনি মাত্র দু’মাসের ছোট। কলিসন ভ্রাতৃদ্বয় ২০-এর কোঠায় থাকা ৪ জন সেলফ-মেড বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে দুজন। বাকি দুজন হলো স্ন্যাপচ্যাটের সহ প্রতিষ্ঠাতাদ্বয়। এছাড়া, এ বছরের তালিকায় ৪০ বছরের নিচে বিলিয়নিয়ার আছেন ৫৬ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৬। সেলফ- মেড বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে নারী রয়েছে ১৫ জন। এদের একজন বাদে সবাই এশিয়া প্যাসিফিকের। এদের মধ্যে ১০ জন চীনের। আর ভিয়েতনামের প্রথম নারী এনগুয়েন থি ফুয়োং থাও। এশিয়ার বাইরের একমাত্র সেলফ-মেড নারী বিলিয়নিয়ার হলেন একজন মার্কিনি। তার নাম থাই লি। তার জন্ম থাইল্যান্ডে হলেও ছেলেবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সব মিলিয়ে তালিকায় নারী বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২২৭ জন।
এবছরই অন্য কোনো দেশের চেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মোট ৫৬৫ জন যা নতুন রেকর্ড। আগের বছর ছিল ৫৪০ জন। এরপরই চীন থেকে এসেছেন ৩১৯ জন (হংকংয়ে রয়েছেন আরো ৬৭ জন ও ম্যাকাওয়ে একজন)। তৃতীয় স্থানে ১১৪ জন বিলিয়নিয়ার নিয়ে রয়েছে জার্মানি। আর ভারত প্রথমবারের মতো শতাধিক বিলিয়নিয়ার নিয়ে ৪র্থ স্থানে রয়েছে। ভারতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ১০১।
এছাড়া, গতবারের তালিকা থেকে এবারের তালিকায় ছিটকে পড়েছে ৭৮ জন। এর মধ্যে ৩৩ জন চীনা আর ৭ জন মার্কিনি। ৯ জন আছেন যারা সম্পদশালী হলেও তাদের সম্পদ পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টনের কারণে তারা এ তালিকায় প্রবেশ করতে পারেন নি। এছাড়া, গত বছর মারা গেছেন ২০ জন বিলিয়নিয়ার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর