মানুষ এত দুর্ভাগা কেন

শেখ তসলিমা মুন

হাগ(আলিঙ্গন)একটি চমৎকার সম্ভাষণ। একটি ভাষা। একটি কম্যুনিকেশন। এখানে এ দেশে প্রতিদিন হাগ পাই, দেই, দিতে হয়, পেতে হয়। বৃদ্ধ তরুণ শিশু সবাইকে। এটি একটি কালচার। যেটি বললাম এটি একটি ভাষাও বটে। আলিঙ্গনের শোভন, অশোভন, বন্ধুত্ব, কনডোলেন্স, বিদায় এসব বহিঃপ্রকাশগুলো চমৎকারভাবে প্রকাশ হয়।

কোন বন্ধুকে অনেকদিন পর দেখলে সে আলিঙ্গনের ভাষাও সেভাবে হয়।
দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে,আমাদের দেশের ছেলেদের এই হাগ বা আলিঙ্গন বিষয়ে এতটুকুন বিদ্যা বুদ্ধি সভত্যা ভব্যতার প্রাইমারী শিক্ষাটুকুন নেই। গতবার দেশে গেলে আমার থেকে বয়সে বেশ বড় এক ভাইপোকে ত্রিশ বছর পর দেখে আবেগ সম্বরোণ করতে না পেরে জড়িয়ে ধরলাম। এ জেসচারটি আমার জন্য খুবই দরকারি। আমি আমার ছেলেদের সকাল বিকাল এক হাজার হাগ করি। কিন্তু ভাইপো এটা নিতে পারলোনা। হাগ বুঝার ক্ষমতা যে তার নেই সেটা সেই মুহূর্তেই বুঝলাম। প্রথমত সে আমাকে যেভাবে চাপচাপি করতে লাগলো যে তাকে এক প্রকার সরিয়ে দিতে হলো। এর পর যা হলো সে আর আমাকে ছাড়েনা।

শরীরের ধার ঘেঁষে বসা ইত্যাদিতে আমি একেবারে মরমে মরে গেলাম। সে বিরক্তি প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য। ভাগ্য ভাল সেখানে আমার বেশীক্ষণ থাকতে হয়নি। নইলে একটা অপ্রীতিকর দৃশ্যের জন্ম দিতে হতো আমাকে।

আমাদের ছেলেদের জন্য আমার মায়া হয়। আলিঙ্গন বলতে তারা একটা বিষয়ই বুঝে। সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাটুকুন ছাড়া এমন চমৎকার একটি শুভেচ্ছা বহিঃপ্রকাশ বিষয়ে নুন্যতম ধারনা নেই। শালীন এবং শোভন হাগসের বেড়া কি সেটা তাদের ধারনায় নেই। এক বন্ধুকে একবার হাগ দিতে গিয়ে আমার পাঁজর ভাঙ্গার অবস্থা। মনে হলো সে আমারে বুকের পাঁজরের হাড়গুলো গুড়োগুড়ো করে দিল। একটি আলতো শুভেচ্ছা হাগ । মানুষ এত দুর্ভাগা কেন?

লেখক: প্রবাসী

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর