রিকশায় ঘুরলেন প্রেসিডেন্ট

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকেও তিনি এক অনন্য ব্যতিক্রম। স্বভাবসুলভ হাস্যরস আর সারল্য তাকে একেবারেই স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে গেছে। বঙ্গভবন তার কাছে এক বদ্ধ খাঁচা আর নিজেকে সেই খাঁচায় বন্দি পাখি মনে করেন তিনি। একেবারেই সাধারণ এই মানুষটির কাছে রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তার ঘেরাটোপকে মনে হয় বেষ্টনী। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অর্ধশতাব্দীর চেয়েও বেশি সময়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তিনি কাটিয়েছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। আর এর বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন তাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে আবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে আগের মতোই মিশতে চান তিনি। নিজ এলাকায় সফরে এসে তিনি যেন আরো বেশি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। রোববার বিকালে নিজের জন্মস্থান মিঠামইনের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার বক্তৃতায় এরকম আকুলতাই প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, আবার যেন আপনাদের মাঝে ফিরে এসে আগের মতো মিশতে পারি, আল্লাহ যেন এই তৌফিক দান করেন। বক্তৃতায় তিনি সাধ্যমতো এলাকার উন্নয়নকাজে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার বক্তৃতায় বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সৎ থাকলে সরকারের কর্মকর্তারাও সৎ থাকবে। যারা হাতেপায়ে ধরে ভোট চায়, তারা জনগণের ঘাড়েও ধরতে পারে। পাঁচশ’/এক হাজার টাকায় কেউ যেন ভোট কিনতে না পারে, সেজন্যে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচনে ভোট কেনাবেচার সংস্কৃতি বন্ধ হলে দেশ এগিয়ে যাবে এবং সমৃদ্ধশালী হবে। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল হক নূরু’র সভাপতিত্বে সুধীসমাবেশে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুস সাহিদ ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব, মিঠামইন সদর ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এর আগে রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় সাবেক নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায় চারদিনের সফরের প্রথম দিনে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে নিজ উপজেলা মিঠামইনে অবতরণ করেন। হেলিপ্যাড থেকে রিকশাযোগে তিনি মিঠামইনের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে যান। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত তমিজা খাতুন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ত্রিতল একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করতে যান। একাডেমিক ভবন উদ্বোধন শেষে তিনি রিকশাযোগে এবং পায়ে হেঁটে মিঠামইন বাজার পরিদর্শন করেন। নিজের রিকশায় প্রেসিডেন্টকে যাত্রী হিসেবে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা রিকশাচালক ইমান হোসেন, রিকশাচালক জানান, মিঠামইনে এলে প্রেসিডেন্ট হাঁটতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কোন বাহনে চড়লে রিকশাই তাঁর পছন্দ। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ গতকালের সফরের সময় হেলিপ্যাড থেকে ডাকবাংলোয় আবার সেখান থেকে তমিজা খাতুন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও যান ইমান হোসেনের রিকশায় চড়ে। স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসীও বললেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকলেও এলাকার মানুষের কাছে তিনি আগের সেই হামিদ ভাই। তার কাছে যাওয়া যায়, তিনি সবার কাছে আসেন, কথা বলেন, খুনসুঁটি করেন, ভালো মন্দের খোঁজখবর নেন। এবারের সফরেও তার ব্যতিক্রম হলো না। মিঠামইন বাজার পরিদর্শনের পর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত হাজী তায়েব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা ভালভাবে লেখাপড়া করো। তোমাদের বিদ্যালয়ের জন্যে একটি বিল্ডিং করে দিয়েছি, আরো করে দিবো। তোমরা যদি ভালভাবে লেখাপড়া না করো তবে ভবিষ্যতে ভাল মানুষ হতে পারবে না। পও েেপ্রসিডেন্ট স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন শেষে ডাকবাংলোয় দুপুরের খাবার সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ রাতে উপজেলা সদরের কামালপুর গ্রামের নিজ বাসভবনে রাত্রিযাপন শেষে সফরের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল সোমবার বেলা সোয়া ১২টায় হেলিকপ্টারযোগে পার্শ্ববর্তী ইটনা উপজেলা সদরে পৌঁছবেন। সেখানে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ও মহেশচন্দ্র বিদ্যানিকেতন পরিদর্শন, নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত সরকারি আবদুল হামিদ কলেজের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগদান ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করবেন। ইটনার জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় রাত্রিযাপন করে সফরের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বেলা ১২টায় তিনি হেলিকপ্টারযোগে যাবেন হাওরের অপর উপজেলা অষ্টগ্রামে। সেখানে তিনি বেলা ১২টা ৫০মিনিট থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অষ্টগ্রাম রোটারি কলেজের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান. সুধি সমাবেশে যোগদান এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করবেন। অষ্টগ্রামের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় রাত্রিযাপন করে পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ১০মিনিট পর্যন্ত অষ্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক ও উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করবেন। পরে সকাল সাড়ে ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট অষ্টগ্রাম ছেড়ে যাবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর