এ রকম গণহত্যা বিশ্বের কোথাও নেই

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছে। শনিবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় অংশ নেন। তারা বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, এ রকম গণহত্যা বিশ্বের আরও কোথাও সংঘটিত হয়নি।
২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য জাসদের সাংসদ শিরীন আখতারের তোলা প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো:

ফজলে হোসেন বাদশাহ
বিশ্বে শত শত প্রমাণ পাওয়া যাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ নিহত হয়েছে। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করা দরকার। সেই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে বাঙালিরা থাকেন, তাদের উৎসাহিত করা দরকার।

মহীউদ্দীন খান আলমগীর
২৫ ও ২৬ মার্চ আমি ঢাকায় ছিলাম, নিজের চোখে যা দেখেছি, তাতে বলতে পারি, পৃথিবীর কোথাও এ রকম অমানবিক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়নি।

শেখ সেলিম
সিমলা চুক্তি অনুযায়ী যে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা-কর্মকর্তার বিচার করার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান সেটা করেনি। এদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগ নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে এদের বিচার করতে হবে।

দীপু মনি
বাংলাদেশে গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাতে সবচেয়ে বড় পাঁচটি গণহত্যার একটি। তবে স্বল্পতম সময়ে এত মানুষ কোনো দেশে মারা যায়নি।

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। তাদের অর্থ সম্পদ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বাজেয়াপ্ত করে সরকারি করার। বাংলাদেশের সব মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করার দাবি।
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকাররা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সে জন্য দাবি জানাচ্ছি।

মঈনুদ্দিন খান বাদল

পাকিস্তানিরা পাকিস্তানের চেহারা পরিস্কার করেছে। কিন্তু তাদের চিন্তা ভাবনার অনুসারী যারা আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে তাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।
২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানকে আমি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মাটিতে রিসিভ করেছিলাম। তিনি কর্ণফুলী নদী অতিক্রম করেনি। সেটি করেছে ২৭ মার্চ। ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গেছে সেটা ২৭ মার্চের কোনো ব্যক্তির ঘোষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না।
পাকিস্তান আর্মির মেজর সাহেব তার প্রথম লেখায় বলেছিলে, চিফ অব স্টাফ আর বাংলাদেশের আন্দোলনের নেতা। এটা কি লেখার ভুল না কি কারও ডিকটেশন।

জিয়াউদ্দিন বাবলু

আমরা ইতিহাসের স্বীকৃতি চাই, বাস্তবতার স্বীকৃতি চাই। মানুষ সত্য জানুক, আমরা সেটা চাই।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া

বিলটি উত্থাপন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা পাস যদি দেখে যেতে পারি, তাহলে শান্তি পাবো। শহীদের আত্মাও শান্তি পাবে।

শাহরিয়ার আলম

আন্তর্জাতিক একটা স্বীকৃতি এরই মধ্যে আছে। এটার গ্রহণযোগ্যতার জন্য যা যা করা দরকার আমার মন্ত্রণালয় তা করবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম

দুনিয়ার কোন দেশে আছে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করে, দুনিয়ায় কোনো দেশে দেখাতে পারবেন না।
আমাদের এই প্রস্তাব ভণ্ডুল করার জন্য আবার চক্রান্ত হতে পারে। এই দেশে সব সম্ভব। এই বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, অথচ খালেদা জিয়া বলেছেন সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ আছে। দুনিয়ার কোন দেশে আছে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করে, দুনিয়ায় কোনো দেশে দেখাতে পারবেন না।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান

পাকিস্তানের কাছে আমাদের অনেক পাওনা রয়েছে। তাদেরকে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং আমাদের পাওনা ৩৫ হাজার কোটি টাকা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
শওকত আলী

অপারেশন সার্চলাইটের নামে বাঙালিদেরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তান। তারা বলেছিল, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ চাই না, জমি চাই।
পঞ্চানন বিশ্বাস
খুলনার চুকনগরে এক দিনে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। আর তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করে রাজাকাররা। এরও স্বীকৃতি দিতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

কেবল গুলি করে হত্যা নয়, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা তরা হাজারো হাজারো মানুষকে নদীতে ভাসদে দেখেছি। তারপরও বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এখানে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হননি। এটাই প্রমাণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অবস্থান কী ছিল।
‘এখন যেমন শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হচ্ছে, সেখাবেই ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন হবে বলে আমি আশা করি।’

হাসানুল হক ইনু
গণহত্যা যেন আমরা পৃথিবীতে না দেখতে চাই, সে জন্য গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তান, বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিরা এই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য উঠেপড়ে নেমেছে। বাংলাদেশে যেন কোনো রাজকার সমর্থিক ও সেনা সমর্থিত সরকার না আসে সে জন্য সব রাজাকারের বিচার করতে হবে।

রাশেদ খান মেনন

পাকিস্তানের হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনা সদস্যরা গণহত্যা ও ধর্ষণে লিপ্ত ছিল। যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিচারের সুপারিশও করা হয়। তা ছাড়া সিমলা চুক্তি অনুযায়ী ১৯৫ জনের বিচারের দায়িত্ব নিয়েছিল তারা নিজেও।কিন্তু তারা সে বিচার করেনি।

পাকিস্তান এখনও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বেলুচিস্তানে। তারা আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। এখন তাদের ওপর নির্যাতন চলছে।
আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিলে বিশ্বের মানুষ এ বিষয়ে আরও বেশি জানতে পারবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।

আ ক ম মোজাম্মেল হক

এটাও একটা দায়মুক্তির বিল। ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিলও ইনশাআল্লাহ আসবে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটাও নেয়া হবে। পাকিস্তানও ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের বিচারের জন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হবে। পাকিস্তানের কাছে সম্পদ আদায়ের জন্য বিলও সংসদে আনা হবে।

২৫ মার্চ কেবল আমরা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবো না। জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু এর কোনো ঐহিতাহিস ভিত্তি নেই। ২৫ মার্চকে যেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা যায়, সে জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করবে।

মতিয়া চৌধুরী
আমরা যখনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি, তখন এক দল লোক পাকিস্তানই হোক, আর বাংলাদেশে হোক, সমস্বরে চিৎকার শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। অথচ জেনারেল নিয়াজীই বলেছেন, এখানে যে গণহত্যা হয়েছিল সেটা বাগদাদে হালাকু খানের গণহত্যার চেয়ে বেশি ছিল।

রওশন এরশাদ

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা আমাদের জানতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এটা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। অনেক পার্লামেন্টে আমি শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক কে। এটা নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি হয়েছে। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদেরকে একটি সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কারা-আমরা নাম ঠিকানা লিখছি। ৪৫ বছর পর এসে কেন আমাদেরকে এটা লিখতে হবে। এটা আমার বোধগম্য হয় না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর