২৫ মার্চ ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাব পাস সংসদে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ স্মরণে দিনটিকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছে। শনিবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়।

এর আগে সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় অংশ নেন। প্রায় সাত ঘণ্টার আলোচনার সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদাররা যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা যারা দেখেনি, তারা বুঝতে পারবে না এর ভয়াবহতা। আমরা চাই এ ধরনের গণহত্যা যেন আর না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এর আগে ২৫ মার্চ শুরু হয়েছিল পাক হানাদারদের গণহত্যা। এর শেষ হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা করে। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ মেধাশূন্য হয়ে যাক। বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে তাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, পাকিস্তানি সরকার যেমন দায়ী, তেমনি এ দেশে তাদের দোসর আলবদর-আলশামসও দায়ী।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাংসদ ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ওই প্রস্তাবের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সেটি যথাযথ সময়ে সংসদে না আসায় তা বাতিল ঘোষণা করে দেন স্পিকার।

প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দেয়ার সময় স্পিকার বলেন, ‘সংসদের সামনে প্রস্তাব হলো মাননীয় সংসদ সদস্য শিরীন আখতারের প্রস্তাব ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক- এই প্রস্তাবের পক্ষে যারা আছেন তারা হ্যাঁ বলুন।’ সংসদে উপস্থিত সব সদস্য এ সময় ‘হ্যাঁ’ বলে তাদের সম্মতি ঘোষণা করেন্।

২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, ‘বিশ্বে গণহত্যার ইতিহাসে যেকোনো দিনের চেয়ে ২৫ মার্চের গণহত্যা একটি দুঃসহ স্মরণীয় দিন।’

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা স্মরণ করে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হোক।’

শনিবার বিকালে অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দিনের অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে কার্যপ্রণালী বিধি-১৪৭ বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য শিরীন আখতারকে আহ্বান করেন।

পরে তার প্রস্তাবের ওপর সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশাসহ ৫৬ জন আলোচনায় অংশ নেন। সবাই এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর