ইউনূসের প্রশংসায় মুহিত: দুঃখ পেয়ে কড়া জবাব প্রধানমন্ত্রীর

দারিদ্র্য বিমোচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনায় পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে সেদিন তিনি (অর্থমন্ত্রী) এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। …অথচ তিনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অর্থমন্ত্রীকে বলবো আপনি যদি হিসাব নেন, তাহলে দারিদ্র বিমোচনের কারণ দেখতে পারবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে দরিদ্রতা ২২ ভাগে নেমে এসেছে। যেখানে অর্থমন্ত্রী নিজেও কমর্সূচি নিয়েছেন।’

রবিবার রাজধানীতে মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণ দারিদ্র্য কমায় না, যারা এই ঋণের ব্যবসা করে তাদের লাভ হয়। আর অর্থমন্ত্রী এসব বিবেচনায় না নিয়ে এমন একজনের প্রশংসা করেছেন যার কারণে পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হয়ে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ৬০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২২ শতাংশ করেছে। এটা আরও কমাবে। যদি ক্ষুদ্র ঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করতো, তাহলে কেন এই হার এক সময় ৬০ শতাংশ ছিল।’

গত বৃস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুসেরও প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, ‘ দেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রথম হত দরিদ্রের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এরপর থেকে অনেক সংস্থা ও এনজিও এ খাতে এসেছে। তারা হত দরিদ্রের মাঝে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে।’ অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। আর যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেন, তারা সম্পদশালী হয়, তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ; ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসেবে চলে যায়। সে কোনোমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। যারা এই ব্যবসা করে, তারা চায়ও না এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমাদের মা বোনরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে। আর লাভ নিয়ে যায় ক্ষুদ্র্রঋণের ব্যবসায়ীরা। যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে তারাও চায় না দরিদ্রতা থেকে সাধারণ মানুষ উঠে আসুক। তা করলে তাদের ব্যবসা থাকবে না। দুঃখ লাগে অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করলেন যার কারণে পদ্মা সেতুর কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকা থেকে আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে বারবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। অর্থমন্ত্রীকে বলি দরিদ্রতা বিমোচন হয়েছে আওয়ামী লীগের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সামগ্রিক নিরাপত্তা কাজ যখন শুরু করলো তখনই দারিদ্র্যের হার কমেছে। ৫ কোটি মানুষ আজ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ পুরস্কৃত হয় আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা তিরষ্কৃত হয়।’

দীর্ঘ বক্তব্যে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের নানা প্রকল্পের বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মূল কাজটা হচ্ছে গ্রামে টাকা দেয়া। সেখানে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রেখে নানা কর্মসূচি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজকে বাংলাদেশে পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরেই দারিদ্র্যের হার কমতে শুরু করেছে। মাঝখানে বিএনপি আসার পর পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়কের দুই বছর-এই সাত বছর দারিদ্র্যবিমোচন থমকে ছিল। পরে ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকারে আসি তখনও দারিদ্র্যের হার আমরা পেয়েছিলাম ৫০ ভাগের কাছাকাছি। সেখান থেকে আট বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২২ ভাগে নিয়ে এসেছি। এবং আমরা আরও কমাবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো মানুষ দরিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনীতি করতে এসেছি জনগণের জন্য। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য না, ব্যবসা করার জন্য না। দারিদ্র্য হ্রাস পেলে ব্যবসা করে বড়লোক হওয়ার জন্য বিত্তশালী হওয়ার জন্য আসি নাই। এসেছি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এসেছি জনগণের সেবা করতে, জনগণের কল্যাণ করতে, জনগণকে সুন্দর জীবন দিতে। যার কারণে দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হচ্ছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর