কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে লড়াই হবে নৌকা ধানের শীষে

কুসিকের ২য় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন যুদ্ধ শেষ। এবার শুরু হচ্ছে ভোট যুদ্ধ।

অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক পেলেন কুমিল্লার বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ অ্যাড. আফজলের মেয়ে ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং কুসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র আঞ্জুম সুলতানা সীমা।

রোববার রাতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সীমাকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অপরদিকে একই দিন সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্তৃক স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন কুসিকের সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।

দলীয় প্রতীকে এবার প্রথমবারের মত হতে যাচ্ছে কুসিকের ২য় নির্বাচন। তাই আওয়ামীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটই নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামবে, সরগরম হয়ে উঠছে কুমিল্লার রাজনীতির মাঠ।

জানা যায়, বিএনপি থেকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু অনেকটা বিনা বাধায় মনোনয়ন লাভ করতে সক্ষম হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে দলের হাফ ডজনেরও অধিক প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে নামতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় ছিলেন, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহসভাপতি আলহাজ মো. ওমর ফারুক, জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আরফানুল হক রিফাত, আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিকদার, কবিরুল ইসলাম শিকদার, নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও জিএস জাকির হোসেন।

কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন? কুসিকের তফসিল ঘোষণার পর এ নিয়ে সর্বত্র ছিল আলোচনা-সমালোচনা। গুঞ্জনও কম ছিল না। কিন্তু সীমার মনোনয়ন লাভের মধ্য দিয়ে আপাতত সেই গুঞ্জনের অবসান ঘটেছে। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে সীমার বাবা ও অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাড.কে পরাজিত করে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু বিজয়ী হয়েছিলেন।

দলীয় কোন্দলের মাঝেও এবার বাবার সেই পদে মনোনয়ন পেলেন সীমা। তাই সীমা এ নির্বাচনকে দল ও পরিবারের সন্মান পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এটা

আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষাও বটে।

অন্যদিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে সাক্কু ও হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন গ্রুপে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশে সকল মানঅভিমান নিরসন করেই মনিরুল হক সাক্কুর হাতে রোববার সন্ধ্যায় মনোনয়ন পত্র তুলে দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আঞ্জুম সুলতানা সীমা:
কুমিল্লার বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ অ্যাড. আফজল খানের ৩ ছেলে ও একমাত্র মেয়ে সন্তানের মধ্যে সীমা সবার বড়। রাজনীতিতে প্রবেশ বাবার হাত ধরেই। স্বামী নেছার উদ্দিন আহমেদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২ সন্তানের জননী সীমা ২০০০ সালে তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার কাউন্সিলর এবং পরে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে সীমা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে তিনি কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। তিনি ২০১২ সালে কুসিকের প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর ও পরে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন। সীমা ২০০৫ সালে গঠিত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

দলীয় মনোনয়ন লাভের পর ঢাকায় অবস্থানরত সীমা মুঠোফোনে বলেন, ‘আজ আমি সীমাহীন আনন্দিত, আওয়ামী লীগের জন্য আমার বাবা ও পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এ জন্য আমি দলের সভানেত্রী, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলার নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

সীমা আরো বলেন, ‘সব দলেই মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকে, আওয়ামী লীগেও ছিল, আশা করি নেত্রীর এ সিদ্ধান্তের প্রতি সন্মান জানিয়ে সবাই মানঅভিমান ভুলে নৌকা প্রতীকের জন্য ঐক্যবব্ধ হয়ে মাঠে কাজ করবে। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মতবিরোধ থাকে, কিন্তু জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক নৌকা নিয়ে তো কোনো মতবিরোধ নেই।’

বিজয়ী হতে সীমা নগরবাসী এবং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সমর্থন ও দোয়া কামনা করেছেন।

মনিরুল হক সাক্কু:
মনিরুল হক সাক্কু। কুসিকের সদ্য সাবেক মেয়র। রাজনীতির পাশাপাশি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৬ সালের নির্বাচনে সাক্কু তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর ২০১২ সালে কুসিকের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রশাসকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

তিনি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নিবাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এ বছর তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী থাকলেও কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে ধানের শীষের প্রতীক তাকেই দেয়া হয়।

ঢাকায় অবস্থানরত সাক্কু রোববার রাতে মুঠোফোনে জানান, সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই কুমিল্লা আসছি। দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য তিনি দলের চেয়ারপার্সন, মহাসচিব, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সাক্কু বলেন, ২টি পৌরসভা একত্রিত করে নব গঠিত এ সিটির হাল আমাকে ধরতে হয়েছে। এ সিটির উন্নয়নে বিদেশি অনুদান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অর্থ এবং সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে গত ৫ বছরে সিটিতে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার নানা উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, কিছু কাজ চলমান আছে। তাই সিটির উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে তাকে পূনরায় নির্বাচিত করতে নগরবাসীর সমর্থন ও দোয়া কামনা করেছেন।

এদিকে আগামী ১ মার্চ রাতে নগরীর রেইসকোর্সের রেড রফ ইন রেস্তোরায় সাক্কু সাংবাদিক সম্মেলন করে তার নির্বাচনী ইস্তেহার ও নগরীর উন্নয়নে তার নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করবেন বলে মুঠো ফোনে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১১ সালের ১০ জুলাই ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা একিভূত করে ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বিজয়ী হন।

আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদানের শেষ তারিখ ২ মার্চ। প্রত্যাহারের তারিখ ১৪ মার্চ। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮৪। সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর