জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কাছে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে রিভিউ

প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার হওয়া কর্মকর্তাদের করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ জন্য খুব শিগগিরই সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা বসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রশাসনে উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতির জন্য রিভিউ আবেদনের পাশাপাশি মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন অনেকে। কেউ ৬ বার, কেউ বা ৮ বার বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। অথচ তাদের দক্ষতা, সততা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব সবই আছে। তারপরেও বঞ্চিত হয়ে তাদের এখন অধস্তন (চার ও পাঁচ ব্যাচ) কর্মকর্তাদের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। চাকরিতে এই অসম্মানজনক অবস্থা থেকে রেহাই পেতে মন্ত্রী থেকে সচিবের কাছে ছুটছেন তারা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও এসএসবি বোর্ডের সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বঞ্চিতদের পদোন্নতি পুনর্বিবেচনা করার বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রীর পাঠানো নির্দেশনা তিনি পাননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ ব্যাচের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পুনর্বিবেচনার জন্য বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। ১৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবেদনটি বিবেচনার জন্য সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে প্রশাসনের অন্য স্তরের বঞ্চিতদের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্ত হচ্ছে। এ জন্য খুব শিগগিরই এসএসবির বৈঠক বসছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কাছে লেখা ’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচের পদোন্নতি বঞ্চিত উপ-সচিবদের আবেদনে বলা হয়, বিসিএসএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ ব্যাচের যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা যথাক্রমে ১১ ও ১৩ বছর ধরে উপ-সচিব হিসেবে কর্মরত আছি। এ পর্যন্ত ৬ থেকে ৮ বার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছি। জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ে আপনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনার সদয় নির্দেশে প্রশাসনের ৩ স্তরের বার বার বঞ্চিতদের জন্য এসএসবির বিশেষ সভা আয়োজন করা হয়। কিন্তু আপনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গত বছরের ১৬ মে নগণ্য সংখ্যক বঞ্চিত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতির সার-সংক্ষেপ স্বাক্ষর করার সময়ে মন্ত্রী নথিতে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া সব বঞ্চিত কর্মকর্তার ক্ষোভ পুরোপুরি প্রশমনের জন্য আবার বিশেষ রিভিউ করার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু সেই সময় রিভিউ না করে নতুন করে পদোন্নতির জন্য উপসচিব পদে ২১, যুগ্মসচিব পদে ১১ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে ৮ম ব্যাচকে বিবেচনায় নেয়া হয়। ফলে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে বিশেষ করে সিনিয়র দুটি ব্যাচ ’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচ থেকে মাত্র ১৫ (’৮৪ ব্যাচ ৫ জন, ’৮৫ ব্যাচ ১০ জন) জনের ভাগ্যে পদোন্নতি জোটে।
’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচের উপসচিবদের বর্তমান সংখ্যা যথাক্রমে ৩৭ ও ৬৬। এই তালিকায় ১০৩ কর্মকর্তা রয়েছেন। পদোন্নতির নীতিমালা অনুসারে বড় জোর ৬০/৬৫ জন পদোন্নতির বিবেচনায় আসতে পারেন। বাকিদের ক্ষেত্রে বিভাগীয় /ফৌজদারি মামলাসহ পদোন্নতির নির্ধারিত বেঞ্চ মার্কের ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
যুগ্ম-সচিব পদে ’৮৫-ব্যাচের পদোন্নতি বঞ্চিত এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, ’৮৪ ও ’৮৫ এ ব্যাচ দুটির ৬০/৬৫ কর্মকর্তার অধিকাংশই আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে অবসরে যাবেন। তাদের পদোন্নতি দিলে এ খাতে সরকারের ব্যয়ও বাড়বে না। কারণ তারা ইতিমধ্যে যুগ্মসচিবের প্রারম্ভিক বেতন স্কেলে পৌঁছে গেছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের জন্য জনপ্রশাসনমন্ত্রীর পূর্বের নির্দেশনা অনুসারে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটি বিশেষ রিভিউর ব্যবস্থা করে বহু-কাক্সিক্ষত যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিলে তারা অন্তত চাকরিতে একটি সম্মানজনক অবস্থান নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ রিভিউ করার নজির এ সরকারের আমলে রয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের পদোন্নতির পর দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর বঞ্চিতদের জন্য একটি বিশেষ রিভিউর মাধ্যমে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল।
বঞ্চিতদের আবেদনে বলা হয়, এ ধরনের প্রক্রিয়ায় পদোন্নতির মূল নীতি অনুযায়ী অর্থাৎ এসিআর-এ বিরূপ মন্তব্য নেই, বিভাগীয় বা ফৌজদারি মামলা নেই এবং পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত বেঞ্চমার্ক রয়েছে- ৮৪ ও ৮৫ ব্যাচের এমন সব কর্মকর্তাকে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্য যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে। পদোন্নতির মূলনীতিমালায় যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহের কোনো বিধান নেই।
গত বছরের (১৬/০৫/২০১৬) পদোন্নতির সার-সংক্ষেপে স্বাক্ষরের সময় নথিতে জনপ্রশাসনমন্ত্রী নির্দেশনায় তা উল্লেখ করেন।
’৮৪ ব্যাচের বঞ্চিত এক উপ-সচিব মানবকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে আমাদের ৪/৫ ব্যাচ জুনিয়ার অফিসাররা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর আমরা আরো নাজুক অবস্থায় পড়েছি। এক সময়ে তারা আমাদের অধস্তন কর্মকর্তা ছিলেন। আমরা তাদের এসিআর লিখতাম। আজ তারা আমাদের এসিআর লিখবেন। আগে তারা আমাদের স্যার সম্বোধন করতেন। এখন আমরা তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করি। এই বেদনা ও হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাই।
এদিকে তথ্য ক্যাডারসহ অন্যান্য ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে দেখা করে রিভিউ আবেদন করেছেন।
জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের আবেদনের বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছেন। সেই অনুসারে এএসবির সভা করার দিনক্ষণ খুব শিগগিরই ঠিক হচ্ছে। তবে তারা এ সুযোগে যুগ্মসচিব ছাড়াও অন্য স্তরের কর্মকর্তাদের বঞ্চনার বিষয়টিও দেখবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর