মেলায় লাখ টাকার বাঘাইড়

বাঙালি সংস্কৃতির আদি থেকেই গ্রামীণ মেলার মৌলিকত্ব ছিল। আবহমানকালে ধরেই গ্রামীণ জনপদের মানুষ বছরের প্রায় সব সময়ই মেলার আয়োজন করে থাকে।

উত্তর জনপদের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় এই মেলার আয়োজন তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে যত মেলা হয়ে থাকে, তার মধ্যে একটি এই পোড়াদহ মেলা। প্রায় ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আজ বুধবার ছিল সেই দিন।

মেলার আশেপাশের পুরো এলাকায় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই উৎসব শুরু হয়। চলে মেলা শেষের পরেও। এই মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিশাল আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও কাঠের আসবাবপত্র।

এবারের মেলায় বেশি আকর্ষণ ছিল রাজশাহী গোদাগাড়ি থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী দুখু মিয়া ও রঞ্জুর ৮৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। তারা ওই মাছটি ১৫শ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি করেন। সেই হিসেবে পুরো মাছের দাম হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ টাকা।

বিপুলের নিয়ে আসা ৮০ কেজি ওজনের বাঘাইড় দাম চায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি জানান, এবছরে মেলায় টোল বেশি চাওয়ায় মাছের দামও বেশি চাইতে হচ্ছে।

একইভাবে বগুড়া থেকে আসা ঠান্ডু মৎস্য ভাণ্ডারে ৭৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম চাওয়া হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়াও মেলায় প্রতিকেজি ছোট-বড় কাতলা ও রুই মাছ ৮শ থেকে ১ হাজার টাকাসহ অন্যান্য মাছের দাম গতবছরের তুলনায় বেশি ছিল।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রত্যেক দোকানের টোল বেশি নেয়া হয়েছে। ফলে মাছসহ প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। এছাড়াও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে বোয়াল, চিতল, রুই, কাতলাসহ নানা জাতীয় মাছ।

এছাড়াও মেলায় ছিল ১০-১২ কেজি ওজনের হরেক রকম মিষ্টি, কাঠের, স্টিলের বাহারি আসবাবপত্র, সাংসারিক হরেকরকম সামগ্রী, কসমেটিকস্, শিশুদের নানাধরনের খেলনা, বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, কারগাড়ি, মোটরসাইকেল খেলা, সার্কাসসহ বিভিন্ন প্রকার আনন্দ বিনোদন।

বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার খণ্ডকালীন ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি মেলায় ছিল লোভনীয় খাবার। এই মেলায় বিভিন্ন জেলার থেকে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

মেলার আশপাশের এলাকার প্রায় সবার ঘরে ঘরে মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতি ঘটে। এতে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

মেলা কমিটির সভাপতি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ও মেলার ইজারাদার এনামুল হক জানান, এবারের মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়- সেজন্য শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছে। এছাড়াও বিশৃঙ্খলা এড়াতে মেলায় পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর