একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন, আমরাও এক সময় চলে যাব

সংসদীয় গণতন্ত্রের আজীবন পূজারী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তার প্রতি সর্বসম্মত শোক জানালো জাতীয় সংসদ। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে দেশ একজন বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও সংগ্রামী পার্লামেন্টারিয়ান রাজনীতিককে হারালো। তিনি আজীবন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। বহু গুণে গুণান্বিত এই পার্লামেন্টারিয়ান যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষনিক যুক্ত ও রেফারেন্স দিয়ে কথা বলতে পারতেন। অনেক কঠিন বিষয়ও হাস্যরসের মাধ্যমে সবার সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারতেন। জনগণকে আকর্ষণ করার এক চমৎকার ক্ষমতা ছিল এই রাজনীতিকের। গণপরিষদেও একজন বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন একাই একশ’।
আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের মধ্যে আর মাত্র ৬ জন বেঁচে আছেন। সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন, সবাইকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। সময় হলে আমরাও চলে যাব। কিন্তু নতুন এমপি ও নতুন প্রজন্মের যারা রাজনীতিতে রয়েছেন তাদের কাছে একটাই কামনা- তারা যেন বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ বুকে ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আর কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকবেন।
রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এমপিরা নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশন সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মানুষ মরণশীল। জন্মালে মরতেই হবে। তবে মানুষ চলে যায়, রেখে যায় তার কীর্তি ও কথাগুলো। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তিনি আজীবন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আজ একটা পর্যায়ে আমরা আনতে পেরেছি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সংসদ নেতা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন জারির পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসায় যায় সেনারা। তখন বুট পায়ে সৈন্যদের দেখে এবং পিতাকে নির্যাতনের শিকার দেখে সহ্য করতে পারেনি তার মাত্র ১০ বছরের পুত্র সৌমেন। মানসিকভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় সৌমেনকে দীর্ঘদিন কানাডায় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা হয়।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচাররা বারবার সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি-আদর্শ বাদ দেয়া হয়েছিল। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করেছি। সেই সংগ্রাম ও কর্মকাণ্ডেও আমাদের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর