বিমান বাহিনীতে চাকরি হচ্ছে ইমাম শেখের : গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ভ্যানচালক ইমাম শেখের চাকরি হচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। রোববার সকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া) আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
তিনি জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুইজন কর্মকর্তা গোপালগঞ্জে এসেছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফাসহ রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
এরআগে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ দুইজন অফিসার পাটগাতী ভ্যানস্টান্ড থেকে ডেকে নিয়ে যান ইমাম শেখকে। তখনো ইমাম শেখ কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। কেন ডেকে নেয়া হলো বঙ্গবন্ধুর মাজার গেটে। কিছু সময়ের মধ্যেই পরিবারের সদস্য নিয়ে গেটে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে সামনের একটি ভ্যান পরীক্ষা করে সেই ভ্যানটি ভালো নয় বলে জানিয়ে দিলেন অফিসাররা। এরপর আমার ভ্যানটি পরীক্ষা করার জন্য ডাকা হয়। তখন স্যাররা বলেন এই ভ্যানে যাওয়া যাবে। তখন প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার ভ্যানে ওঠেন। আনন্দে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি। প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেন। আমি যে কী বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
ইমামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার উপজেলার পাটগাতী গ্রামের সরদার পাড়ায়। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বাড়ির পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ইমামের বয়স ১৭ বছর। এখন তার জীবনযুদ্ধ চলে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে। বাবা আব্দুল লতিফ মানসিক রোগী, মা গৃহিণী। ইমাম শেখরা দুই ভাই, তিন বোন। এক ভাই ঢাকায় নতুন চাকরি শুরু করেছেন। এখনও বেতন পাওয়া শুরু হয়নি। ইমাম এলাকাতেই ভ্যান চালান। তার উপার্জনেই চলে সংসার।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভ্যান চালক ইমামের সঙ্গে প্রথম যখন মোবাইলে কথা হয়। তখনো ইমাম জানেন না তার ছবি দেশ বিদেশের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়েছে। এই তথ্যটি জানার পর তার উচ্ছ্বাস আকাশ ছোঁয়া। এরপর তাকে কিছু না জানিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ১৪টি পত্রিকা নিয়ে সকাল সাড়ে এগারোটায় পাটগাতী বাজারে যাই। গিয়ে ফোন করার কিছুক্ষণের মধ্যে ভ্যান নিয়ে হাজির হন এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেই ভ্যান চালক ইমাম। তখন তার বাড়িতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিজের ভ্যানে করেই বাড়িতে নিয়ে যান। ইমামের মায়ের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে একে একে পত্রিকাগুলো বের করি। প্রতিটি পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইমামের ছবি দেখে যেন কেউ নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আজকের দিনে এটাই ছিলো তাদের জন্য অন্য রকম চমক।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনের কথা বলা হলো না ইমাম শেখেরইমামের মা শাহানুর বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মত একজন মানুষ আমার ছেলের ভ্যানে উঠে এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন, এটাই আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমরা গরীব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মত গরীবদের মূল্যায়ন করেন, এটা দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর কোন চাওয়া পাওয়া নাই।
ইমামের মানষিক ভারসাম্যহীন বাবাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছেলের ছবি দেখে অনেক খুশি হয়েছেন।
ইমামের এলাকাবাসীরা জানান, ইমামের ভ্যানে প্রধানমন্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা এলাকা ঘুরেছেন। এ খবর শোনার পর কেউ বিশ্বাস করছিলেন না। তবে শুক্রবার দুপুরে ফেইসবুকের মাধ্যমে যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তখন সবাই ইমামকে খুঁজতে থাকেন, তাকে একবার দেখার জন্য।
ওই ভ্যান চালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে অনেক কথাই বলেছেন। বাড়ি কোথায়। কেমন আয় রোজগার হয়। বাড়ির অবস্থা কেমন। বাবা কি করেন। এমন অনেক কথা। এ সময় ভ্যানে ইঞ্জিন লাগানো দেখে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেন, তুমি তো আমার বিদ্যুতের ক্ষতি করছো। দেশের বিদ্যুৎ এভাবে নষ্ট করা ঠিক নয়। এ কথা শুনে আমি প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে দেই। তখন প্রধানমন্ত্রীও হেসে দেন।
ভ্যানচালক ইমাম শেখ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে মনের আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর বলা হয়নি। ইচ্ছা ছিল যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরির কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী আমার ভ্যানে চড়ে ঘুরবেন এমনটা কোনোদিনও কল্পনা করতে পারিনি। এ আনন্দে শেষ পর্যন্ত আর মনের কথা বলতে পরিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর