যৌন নিপীড়নের লজ্জা বিকৃত পুরুষের, নারীর নয়

পীর হাবিবুর রহমান

মেয়েরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সবখানে! ছোটবেলা থেকে পারিবারিক পরিমন্ডল, সামাজিক অাবহে। সংসদে একবার চুমু মতিন আলোচিত হয়েছিলো। চক্ষুবিশেষজ্ঞ এই মানুষটি রোগিনীকে চোখ দেখতে গিয়ে চুমু খেতে চেয়ে অপদস্থ হয়েছিলেন। সেটিই সংসদে তোলপাড় অনেক পর। তিনি উপ প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। আরেকজন হাঁটু পর্যন্ত শাড়ি তুলে অপমানিত হন।

আমার জানা এক নিউরোড়জিস্ট বন্ধু পত্নীকে দেখতে গিয়ে ধরে বসে, থাপ্পর খান। কেন এসব বলছি? কদিন আগে মেয়েদের বয়স ১৬ না ১৮ হবে এ নিয়ে এক টকশোতে অংশ নেই শ্রদ্ধেয়া সুলতানা কামাল ও খুশি কবিরের সাথে। তখন মেয়েদের নিরাপত্তা অভাবের বিষয়টি ওঠে আসে। চুমু মতিনের চরিত্র উন্মোচিত হলে মামুলি রিজভির কেন নয়!

কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রেফতার হন, যিনি বিবাহিত কিন্তু ছাত্রীকে যৌন নীপিড়ন করেছিলেন এ অভিযোগে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নীপিড়নের অভিযোগ ডালভাত। আমার জানা এক রাজনীতিবিদ যেখানে সেখানে হাত বাড়িয়ে সফল হন। শাড়ি আর শাড়ি উপহার, তদবির করে দিয়ে বাগে নেন। এক আত্বমর্যাদশীল নারীকে এক্সক্লুসিভ নিঃশর্তপ সময় কাটানোর প্রস্তাব দিয়ে হতাশ হন। সরকারি বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন নীপিড়নের ঘটনা অহরহ ঘটছে। যৌনবিকৃত পুরুষরাই এমনটি করে, প্রেমিক পুরুষ কখনো এটা করেনা। তার প্রেম নিবেদন, বিয়ের প্রস্তাবদানের সাহস থাকে।

যাক, শৈশব থেকে কৈশোর, তারুণ্যের বিভিন্ন পর্বে এমনকি বিবাহিত জীবনেও মেয়েরা বিকৃত পুরুষদের দ্বারা পরিবার, সমাজসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

পরিবার থেকে শেখানো হয় ছেলে থেকে মেয়ে সবাইকে, এটা করোনা, ওটা করোনা, এটা বলোনা, ওটা বলোনা এসব। সাহসটা, প্রতিবাদের শক্তিটা আঁতুড় ঘরেই শেষ করে দেয়া হয়।

লজ্জা গ্লানি ঘেন্না যে বিকৃত পুরুষের, যৌন লালসার শিকার মেয়েটির নয়-এটা বলা হয়না। তাই মেয়ে থেকে নারী যেখানেই অশ্লীল ইঙ্গিত, প্রস্তাব, বা আক্রমনের শিকার হয় তার প্রতিবাদ দূরে থাক নিজের লজ্জা মনে করে নিজের মতোন গোপন রাখে।

অথচ পরিবার থেকে সমাজ সবখানে মেয়েদের অধিকার, সাহস, শক্তি দেয়া উচিত, অন্যায়, পাশবিক লালসার প্রতিবাদ করা উচিত। যে নষ্ট অসভ্য গ্লানি লজ্জা তার, তোমার নয় হে নিরীহ নারী, মিষ্টি মেয়ে।

অসভ্যতাকে, যৌনবিকৃতিকে, প্রশ্রয় দিয়ে,অসভ্য পুরুষের কামলিপ্সা ও আচরণ গোপন রাখা আত্বমর্যাদা সম্পন্ন নারীর কাজ নয়। নারী, মেয়ে তুমি অবলা নও। এ লজ্জা তোমার নয়।তাদের যারা তোমাকে নিরীহ ও সস্তা মনে করে।তুমি পরিবারকে জানাও। আইনের আশ্রয় নাও। সমাজকে বলো। পরিবার,সমাজ এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।

উচ্চশিক্ষিত সমাজপতি তরুণী নারী যদি মনে করে যৌনবিকৃত পুরুষের লালসা নয়, ডাক্তার চেম্বার থেকে কর্মক্ষেত্র, নেতার বাড়ি অফিস যাওয়া তার অন্যায় তাহলে সাধারন নারীর, মেয়ের অবস্থা কত করুণ! ভাবতেই অবাক লাগে।

মেয়ে, নারী যদি তোমার নিজের আত্বসম্মানবোধ থাকে, আত্বমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে, ওদের মুখোশ খুলো। ঘেন্না করো, প্রতিবাদ করো, আপোস নয়। এই লজ্জা গ্লানি যৌননীপিড়কের, তোমার নয়।

সমাজকে জাগাতে হলে আগে সবার নিজেকে জাগতে হবে। ওদের ঘেন্না করতে হবে, সহানুভূতি নয়। প্রতিবাদ করতে হবে। দেশকে সংবিধান আইন বিধি মোতাবেক চলতে হবে। সচেতনতা ব্যক্তি ও পরিবার থেকে শুরু করে সমাজে তার ঢেউ ছড়াতেই হবে। আত্বমর্যাদহীন জীবন গ্লানির, গৌরবের নয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর