সার্চ কমিটির তিনজন নিয়ে আপত্তি বিএনপির

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠনের পর থেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন বিএনপির নেতারা। জানা গেছে, বিশেষ করে, ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির আহ্বায়কসহ তিনজনের ব্যাপারে আপত্তি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটির।

তবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি না হলে আন্দোলনে নামার যে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল দলটি, সে রকম কিছু ঘোষণা এই মুহূর্তে দেবে না তারা। দলীয় সূত্র বলছে, আপাতত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের কয়েকজন সদস্যের ব্যাপারে বিরোধিতার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

সার্চ কমিটি নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুক্রবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ঢেকেছে বিএনপি। সেখানে সব বিষয় বলা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা।

ঘোষিত সার্চ কমিটি বাতিল করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠনেরও দাবি করা হতে পারে সংবাদ সম্মেলনে।

দলীয় সূত্র জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় সার্চ কমিটি চূড়ান্ত হওয়ার পর রাতে চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত হয় সেখানেই।

অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এক দিন অপেক্ষা করুন, সব জানতে পারবেন।’

সার্চ কমিটির ব্যাপারে আমীর খসরু বলেন, ‘যারা এই কমিটিতে আছেন, তাদের চেনেন সবাই। আমরা যে আশঙ্কার কথা বলেছিলাম, শেষমেশ তা-ই হলো। সরকার রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে দলীয় কমিটি করেছে।’

বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেবে কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, কিছু হলে জানবেন।’

বুধবার গঠিত নতুন সার্চ কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান হলেন সদস্যসচিব। আর সদস্য হিসেবে আছেন মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আলম, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আক্তার।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটির তিনজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি দলটির। শেষ পর‌্যন্ত সার্চ কমিটি মেনে নিলেও ওই তিনজনকে বাদ দেয়ার দাবি করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দিনসহ অন্য কমিশনারদের খুঁজে বের করেছিল যে সার্চ কমিটি, সেই কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন নতুন ঘোষিত সার্চ কমিটির আহ্বায়ক। অন্যদের মধ্যে একজন ছিলেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব। অন্য একজন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক, শোনা যাচ্ছে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। এমন কমিটি কোন ধরনের লোকদের নাম সুপারিশ করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’

সুনির্দিষ্ট নাম জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়। ওই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক সমালোচনা রয়েছে। ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের গঠিত যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয় এই নির্বাচন কমিশন, তারও প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আরেক সদস্য সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন। এ ছাড়া সার্চ কমিটির একমাত্র নারী সদস্য শিরীণ আক্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠনের নির্বাচিত সদস্য।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, দলনিরপেক্ষ ও সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি। কিন্তু আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, তাই তো হলো।’ এর প্রতিবাদে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির চিন্তা থাকলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর