অর্থনৈতিক সাফল্যে ভারত থেকে ২৪ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ১৬ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের ‘ইনক্লোসিভ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই)’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ফোরামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতের অবস্থান ৬০ এবং পাকিস্তানের ৫২তম।

‘আইডিআই’ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে হিমালয়ের দেশ নেপাল। প্রতিবেদন অনুযায়ী নেপালের অবস্থান ২৭তম।

বিশ্বের ৭৯টি দেশ থেকে সংগৃহীত নানা তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিবছর এই প্রতিবেদন তৈরি করে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে চলমান ৪৭তম বার্ষিক সভা উপলক্ষে ইকোনমিক ফোরাম স্থানীয় সময় গেল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অবস্থান ১৫ তম।

ফোরাম বলেছে, শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও পলিসি সংক্রান্ত অসংগতির জন্য বিশ্বের অনেক দেশ প্রচুর অর্থ খরচ করেও সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক নানা সংকট সমাধান করতে পারছে না।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং বাজেটের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হলে, উন্নয়নকামী দেশসমূহকে অবশ্যই নিজেদের বর্তমান পলিসি নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

ইকোনমিক ফোরাম ১২টি ‘নির্দেশক’কে ভিত্তি করে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার জন্য জিডিপি ছাড়াও তিনটি মূল মানদণ্ড -‘প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন’, ‘অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং প্রজন্ম প্রতিনিধিত্বমূলক সমতা’ এবং টেকসই উন্নয়ন’- এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

‘আইডিআই’ অন্তর্ভুক্তিকর উন্নয়নের বিচারে সবার ওপরে স্থান পেয়েছে ইউরোপের দেশ লিথুয়ানিয়া। এর পরেই আছে ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজান এবং ইউরোপের আরেক দেশ হাঙ্গেরি।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সাহায্যকারী দেশ রাশিয়া স্থান পেয়েছে ১৩তম স্থানে। অন্যদিকে ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের অবস্থান ৩০তম।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন কেরি।

সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে চলমান ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভায় বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সাথে এক সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় কেরি এসব কথা বলেন।

কেরি বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও অসাধারণ স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের এই সাফল্যের কৃতিত্ব কার? প্রশ্ন করা হয়েছিল অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে।

অধ্যাপক ফরি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা আকাশসম, দরকার শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সরকার, ব্যবসায়ী, জনগণ, রাজনৈতিক দলসমূহ সবাই বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক উন্নয়নের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। গত একটি বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে স্থিতিশীল সময় হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। এই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারলেই বাংলাদেশ ক্রমশ উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অর্থনীতিতে সক্রিয় মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা খুবই ইতিবাচক।’

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম থেকে বাংলাদেশ এই অর্থনৈতিক সুসংবাদ তখনই পেল যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সভায় অংশ নিচ্ছেন।

পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গেল সোমবার সকালে সুইজারল্যান্ড পৌঁছেন। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বাংলাদেশি নির্বাচিত নেতা হিসেবে এই ফোরামে যোগ দিতে গিয়েছেন।

সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারি চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘প্রতিবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরামের বার্ষিক সভায় উদ্বোধনী এবং নানা প্লেনারি সেশনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নানা সাফল্য তুলে ধরছেন। আগামী ২১ জানুয়ারি সকালে সফর শেষ করে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর